Sunday, May 5, 2024
Homeবিনোদনদরোজার ওপাশে কুসুম সিকদার

দরোজার ওপাশে কুসুম সিকদার

দুই দশক ধরে শোবিজে আলো ছাড়ানো কুসুম শিকদারকে এখন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছোটপর্দায় সর্বশেষ তিনি অভিনয় করেন হানিফ সংকেত পরিচালিত ‘শেষ-অশেষ’ নাটকে, এটি প্রচার হয়েছিল ২০১৮ সালে ঈদে। বড়পর্দায় সর্বশেষ অভিনয় করেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’ সিনেমায়। মাঝে নিজের গাওয়া ‘নেশা’ নামের একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করে আলোড়ন তুলেন কুসুম। এটাকে অশালীনতার দায়ে ওইসময় প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন অনেকেই।

একটা সময় লাখো তরুণের হৃদয় নাচানো এই লাক্স সুন্দরী কই হারালেন? সুজানা জাফর আর এ্যানি খানের মতো কুসুমও কি শোবিজকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? অবসরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা আপাতত করছেন না জানিয়ে কুসুম সিকদার বলেন, আমি আত্মপরিচয় মুছে ফেলতে রাজি না। আজকে এই আমাকে মানুষ পরিচয়ে চেনে তা অসম্মান করতে পারি না।

বেশ কিছুদিন হলো আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, টিভিতে বা চলচ্চিত্রে কোথা আপনি নেই? জবাবে কুসুম বলেন, কাজ না করা মানে হারিয়ে যাওয়া নয়।আসলে কাজের প্রস্তাব প্রায়ই আসে আমার কাছে। কিন্তু নিজে থেকেই কাজ করছি না। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে গড়পড়তা কাজে মন টানে না। সর্বশেষ টিভিতে আমি অভিনয় হানিফ সংকেতের মতো একজন নির্মাতার নাটকে, যেটি প্রচার হয় ঈদের বিশেষ নাটক হিসেবে। আমার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘শঙ্খচিল’ ভারতের সেরা বাংলা ছবি হিসেবে দেশটির জাতীয় চলচ্চিত পুরস্কার পেয়েছে। খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ পরিচালিত এ ছবিতে প্রসেনজিতের মতো নায়কের বিপরীতে অভিনয় করি।

তিনি বলেন, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আমাকে এই অবস্থানে আসতে হয়েছে। এ অবস্থান থেকেই আমি যেমন তেমন কাজ করতে চাই না। সত্যি বলতে, এই সময়ে পরিচালক পছন্দ হলে, গল্প পছন্দ হয় না। আবার গল্প পছন্দ হলে পরিচালক-বাজেট পছন্দ হয় না। এসব কারনেই অভিনয়ে আমি নেই।

গত দু’বছরে শুধু একটি নাটকে অভিনয় করেছেন জানিয়ে কুসুম বলেন, এখন যে ভালো নাটক নির্মাণ হচ্ছে না এটা বলব না। তবে খুব বেশি ভালো নাটক যে নির্মাণ হচ্ছে সেটিও বলা যাবে না। এখন প্রায় নাটকের গল্পই কাছাকাছি ও গতানুগতিক। নিজেকে উপস্থাপন করার মতো চরিত্র পাচ্ছি না। তাই কাজ করা হচ্ছে না।

সাড়া জাগানো ‘নেশা’ মিউজিক ভিডিওর পর আপনাকে তো গানেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? উত্তরে কুসুম সিকদার বলেন, এ ধারণা ভুল। গান চর্চার বিষয়। নিয়মিতই গানের চর্চা করি।গান নিয়ে নতুন একটা পরিকল্পনাও আছে। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আবার কবে নতুন গান প্রকাশ করবো সেটি নিশ্চিত নয়।

শিক্ষাজীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি ঝোঁক ছিল কুসুম সিকদারের। ২০১৫ সালে আগে ‘নীল ক্যাফের কবি’ নামে তার লেখা একটি কবিতার বই বের হয়েছিল বইমেলায়। এরপর ২০১৭ সালে ‘শরতের জবা’ নামে ছোট গল্পের বই বের হয়।

করোনা মহামারির এই সময়টা তিনি লেখালেখিতে মনোযোগী হয়েছেন। এরইমধ্যে দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ছায়াকাল’ প্রকাশের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেছেন। নিজের লেখা তিনটি গল্প দিয়ে সাজানো এ বইটি আগামী বইমেলা বের করবে বলে জানালেন কুসুম।

লেখালেখি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লেখালেখি অভ্যাস দীর্ঘদিনে। তবে এর বেশিরভাগই নিজের জন্য। দুইটি গল্প আগেই লেখা ছিল, নতুন গল্পের বই প্রকাশের আরেকটি গল্প লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম অনেকদিন ধরেই। মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি নানা ব্যস্ততায় করোনাকালে ঘরবন্দি থেকে সেই কাজটা শেষ করলাম।

করোনা দূর্যোগে কুসুম সিকদার চেষ্টা করেছেন নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই মানুষের জন্য কিছু করার। করোনা লড়াইয়ে থাকা ফ্রন্টফাইটার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের সুরক্ষার জন্য পিপিই দিয়ে তিনি সহায়তা করেছেন। শোবিজের নিম্ন আয়ের কলাকুশলীদেরও সহায়তা দিয়েছেন। দুইমাস শুটিং বন্ধ থাকায় আয়-উপার্জনহীন টিভিনাটকের প্রোডাকশন বয়,স্পট বয় ও লাইটের ৩০ জন কলাকুশলীদের তিনি নিত্যপণ্য কিনতে রোজার ঈদে অর্থ সহায়তা দেন।

এ প্রসঙ্গে কুসুম সিকদার বলেন, আমাদের আরো অনেকদিন করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সংকট নেমে এসেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবন ও জীবিকায়। আমরা যারা শিল্পী, তারা প্রত্যেকেই মানুষের ভালোবাসায় ধন্য। এই দূর্যোগে তাই প্রতিটি শিল্পীর উচিত নিজ সামর্থ্যের মধ্যে থেকে অসহায় মানুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা।

করোনকালের সংকট তাকে নানাভাবে আলোড়িত করছে উল্লেখ করে দূর্যোগকালীন সময়ে মানুষে মানুষে সম্পর্ক আর পাল্টে যাওয়া জীবিকা ও জীবন নিয়ে নতুন কিছু লিখতে চান বলে জানালেন কুসুম সিকদার।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments