অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা সুস্থদের চেয়েও ভালো করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২০২১’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলার বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া উচিত। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো ঢাকা শহরেই খেলাধুলার জায়গা কম। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি- প্রতিটি এলাকায়ই যেন খেলার মাঠ থাকে। অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রাও ভালো পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি আমরা খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। রাজধানীর বাইরে সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করার উদ্যোগ নিয়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৬টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে দেশের অবশিষ্ট ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ চলমান।
এ সময় প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করারও নির্দেশ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্তত বাবা-মা, অভিভাবকদেরকে অনুরোধ করব কিছু সময়ের জন্য হলেও ছেলেমেয়েরা যাতে হাত-পা ছুড়ে খেলতে পারে সেটার উদ্যোগ আপনাদের নেওয়া উচিত। আর প্রত্যেকটা এলাকায় খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের শহরের শিশুরা এখন তো সবাই ফ্ল্যাটে বাস করে। ফ্ল্যাটে বাস করে করে তারা ফার্মের মুরগির মতোই হয়ে যাচ্ছে… মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর আইপ্যাড ব্যবহার করে। সারাক্ষণ ওগুলোর মধ্যে পড়ে থাকে। এটা আসলে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থতার লক্ষণ না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা-দৌড় ঝাঁপের মধ্যে দিয়ে শারীরিক, মানসিক বিকাশ হওয়ার সুযোগ পায়। খেলাধুলা, স্পোর্টস একটা জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখে বলে আমি বিশ্বাস করি… খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে শারীরিক-মানসিকভাবেও ছেলেমেয়েদের যথেষ্ট উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, আব্বার টিম ও আমার টিমে যখন খেলা হতো তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। আমাদের স্কুল টিম খুব ভাল ছিল। মহকুমায় যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের অভ্যন্তরে, গ্রামে অনেক খেলা আছে। এসব গ্রামীণ খেলা কিছু চালু করা হয়েছে। এগুলো সচল করতে হবে। এসব খেলায় খুব বেশি খরচও লাগে না। আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা যাতে ব্যাপকভাবে চলে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন সেটাও করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ থেকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ফলে ২০০৯ থেকে ২০২১ সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে দেশের সফলতার পরিসংখ্যান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে আমাদের জাতীয় দলগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে মোট ৪৭৩টি স্বর্ণ, ৪৭৪টি রৌপ্য, ৫৪৭টি তাম্র পদক অর্জন এবং ৯৬ বার চ্যাম্পিয়ন, ২৩ বার রানার্স আপ ও ২১ বার তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।