Sunday, May 19, 2024
Homeবিনোদনসুশান্তের মৃত্যুতে সামাজিক মাধ্যমে তোপের মুখে রিয়া

সুশান্তের মৃত্যুতে সামাজিক মাধ্যমে তোপের মুখে রিয়া

বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মতো সাধারণ মানুষের কাছে সুপরিচিত ছিলেন না তার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী। রাজপুতের মৃত্যুর পরেই মিজ. চক্রবর্তীর নাম জানতে পারেন সাধারণ মানুষ। গণমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমগুলোয় প্রকাশ পেতে থাকে মডেল ও অভিনেত্রী বাঙালি নারী রিয়ার নাম।

প্রশ্ন তোলা শুরু হয় তিনি কেন সামনে আসছেন না! জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করতে শুরু করে, ‘কোথায় রিয়া’ ইত্যাদি শিরোনাম।

আর কিছুদিন পর থেকে তার দিকেই আঙ্গুল তোলা শুরু হয়, যে তিনিই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন সুশান্তকে। অভিযোগ ওঠে সুশান্তের মৃত্যুর পর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।

একদিকে যখন অভিযোগ তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে রিয়া চক্রবর্তীকে একেবারেই দোষী বলে বিচার করে ফেলা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তাকে ‘হত্যাকারী’, ‘গোল্ড-ডিগার’, ‘উইচ’ বা ‘ডাইনি’, ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হতে থাকে, অন্যদিকে কেউ আবার তাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয় কেউবা আবার রিয়াকে আত্মহত্যা করতে নির্দেশ দেয়।

রিয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে কী ধরনের কথা লেখা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, তার ওপরে নজর রেখেছিলেন ভারতে বিবিসির নারী বিষয়ক সংবাদদাতা দিভ্যা আরিয়া।

দিভ্যা আরিয়া বলেন, রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে শুধু সুশান্ত সিং রাজপুতের পরিবার একটা অভিযোগ দায়ের করেছে। তার দোষ আছে কি-না, সেই বিচারে যাচ্ছি না। কিন্তু আদালতের বিচার তো শুরুই হয়নি – তদন্তই এখনও সবে আরম্ভ হয়েছে — কিন্তু ইতিমধ্যেই সুশান্ত সিং রাজপুতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনায় রীতিমতো দোষী বানিয়ে ফেলেছে সামাজিক মাধ্যম এবং এক শ্রেণীর গণমাধ্যমও।

তিনি বলছেন যে সব মন্তব্য করা হয়েছে তা থেকে ভারতীয় সমাজের একাংশের নারী বিদ্বেষ যেমন বেরিয়ে আসছে, তেমনই কারও মানসিক অবসাদ হলে যে কী কী তিনি করতে পারেন, তা নিয়ে জ্ঞানের অভাবও দেখা যাচ্ছে।

‘এছাড়া বলিউডি নাটক – যার ওপরে ভারতের গণমাধ্যম অনেকটাই নির্ভর করে, তাও রয়েছে এখানে। শুধু যে সাধারণ মানুষ এসব বলছেন, তা নয়। সুশান্ত সিংয়ের পরিবার, বন্ধুরা এবং কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কথা বলছেন রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে,’ বলছেন দিভ্যা আরিয়া।

সুশান্তের মৃত্যুর প্রায় দেড় মাস পরে তার বাবা বিহার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রিয়া এবং তার পরিবার এবং আরও কয়েকজনের নামে। অভিযোগ দু’টি: এক, তারাই সুশান্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন। আর দুই, তিনি মারা যাওয়ার পরে ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়েছেন।

বিহার পুলিশ আর মুম্বাই পুলিশের মধ্যে তদন্ত নিয়ে শুরু হয় অভূতপূর্ব টানাপড়েন। এরপরেই বিহার সরকার আবেদন করে যে এই মৃত্যুর তদন্ত করুক কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই।

কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সায় দেয়ার পর তদন্ত ভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই বৃহস্পতিবারই রিয়া এবং তার পরিবার ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনাসহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করেছে। এবার তারা জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শুরু করবে।

অন্যদিকে সুশান্তের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন তার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী, ওই অভিযোগের তদন্তে নেমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট শুক্রবার রিয়া চক্রবর্তী এবং তার ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মুম্বাইতে।

কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জী বলছিলেন মুম্বাই পুলিশ যেভাবে তদন্ত করেছিল, তাতে অনেক অস্বচ্ছতা ছিল, সেই রাগটাই গিয়ে পড়ছে রিয়া চক্রবর্তীর ওপরে।

মুম্বাই পুলিশের তদন্তে প্রথম থেকেই যেন মনে হচ্ছিল যে কিছু একটা ধামাচাপা দিতে চাইছে তারা। অনেক অস্বচ্ছতা ছিল তাদের তদন্তে। এটা সাধারণ মানুষেরও মনে হয়েছে। সেই ক্রোধেরই শিকার হয়েছেন রিয়া চক্রবর্তী।

‘তার দোষ ছিল কী না, সেটা তো আদালত বিচার করবে। সামাজিক মাধ্যমের সমস্যা এটাই, যে সেখানেই বিনা তদন্তে, বিনা বিচারে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলা যায়। কোথাও তো এর নজরদারি হয় না,’ বলছেন মি. চ্যাটার্জী।

কিন্তু যেভাবে রিয়া চক্রবর্তীকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেওয়া হচ্ছে আর ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, সেটা কখনই মানা যায় না বলে মন্তব্য করেন জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জী।

তিনি বলছেন, সামাজিক মাধ্যমের এই সব পোস্ট ধরে ধরে ফৌজদারি আইন এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ দায়ের হলে যারা এসব বলছেন, তাদের শাস্তি হবেই।

ভারতে এর আগেও নানা ঘটনায়, ধর্ষিতা নারীদেরও চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাদের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে। বাদ যাননি দিল্লির নির্ভয়া নামে পরিচিত ধর্ষিত এবং নিহত ছাত্রীটিও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা একদিকে যেমন নারী বিদ্বেষ, অন্যদিকে পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত, অভিনয় বা মডেলিং জগতের সঙ্গে যুক্ত নারীদের প্রতি ভারতীয় পুরুষদের একাংশের জিঘাংসা।

রিয়া চক্রবর্তী দোষী কিনা, তা তো আদালত বিচার করবে, কিন্তু তার প্রতি সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমের একাংশের এই মনোভাব একেবারেই কাম্য নয়- বলছিলেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় পরিচালক সুদেষ্ণা রায়।

‘রিয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে যা হচ্ছে, তা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ। ঠিকই, সুশান্তের পরিণতি অন্য অনেকের মতো আমাকেও খুবই ব্যথিত করেছে। কিন্তু রিয়ার সঙ্গে যা হচ্ছে, তাতে যদি ওর কিছু হয়ে যায়, তার দায়িত্ব কে নেবে?’ প্রশ্ন সুদেষ্ণা রায়ের।

তার কথায়, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া তো পুরুষতান্ত্রিকতার কদর্য বহিঃপ্রকাশ।

শুধু যে রিয়া চক্রবর্তীর এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে তা নয়। বাঙালি নারীদেরও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।

বাঙালি নারীদের ডাইনি, তারা কালাযাদু করে ইত্যাদি বলা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের কাছে বাঙালি নারীদের ট্রল করার জন্য গত এক সপ্তাহে অন্তত ৩০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্তে নেমেছে কলকাতা পুলিশও। খবর: বিবিসি বাংলা।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments