Monday, June 30, 2025
HomeScrollingমৃত্যু থেকে বাঁচার যে আমল শিখিয়েছেন নবীজি

মৃত্যু থেকে বাঁচার যে আমল শিখিয়েছেন নবীজি

প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে তা-ই শিখিয়ে গেছেন, যে শিক্ষার মধ্যে নিহিত রয়েছে সবরকম কল্যাণ। নবীজির সুন্নত অনুসরণে শুধুই লাভ; কোনো ক্ষতি নেই। তাঁর দেখানো পথ সবচেয়ে উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত। তিনি এমন এক আমলের ব্যাপারে উম্মতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যে আমল বরকতে পূর্ণ। জটিল রোগ থেকে মুক্তির উপায়। হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি এড়ানোর উত্তম পদ্ধতি।

সেটি হলো—রাতে জলদি ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ভোরবেলা উঠা। এই অভ্যাসটি ইসলামি বিশ্বাসমতে, সুস্বাস্থ্য ও উপার্জনে বরকতলাভের পূর্বশর্ত। তাই তো প্রিয়নবী (স.) এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি: ৫৯৯)

বিষয়টি পবিত্র কোরআনেও উদ্ধৃত হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘুমের উপযোগী সময় রাত। এজন্য মহান আল্লাহ রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং শীতল করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন ঘুম।’ (সুরা ফুরকান: ৪৭)

আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানও একই কথা বলছে। বলা হচ্ছে, রাতে দেরি করে ঘুমানো মারাত্মক রোগ-ব্যাধির কারণ। বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা ব্যক্তিদের চেয়ে রাতজাগা মানুষের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা ১০ শতাংশ বেশি। গবেষণায় দেখা যায়, দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক জটিলতার শিকার হতে হয়। তাছাড়া রাত জাগার বদভ্যাস যারা গড়ে তুলেছেন তাদের ৯০ শতাংশ বিভিন্ন মানসিক ব্যাধির শিকার হন। ৩০ শতাংশের থাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এছাড়া স্নায়বিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

বিখ্যাত জার্নাল ‘অ্যাডভান্সেস ইন নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, রোজ রাত করে ঘুমোতে যাওয়া ও সকালে দেরি ওঠার অভ্যাস থেকে হার্টের অসুখ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বহুলাংশে বাড়ে। রাত জাগা থেকেই হার্টের রোগ বা ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে বলে বিজ্ঞানীদের মত।

স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার এখতিয়ার ইসলাম কাউকে দেয়নি। ওয়াহাব (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে।’ (বুখারি: ৫৭০৩; তিরমিজি: ২৩৫০) নবী কারিম (স.) আরও বলেন, ‘মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আর কিছু প্রদান করা হয়নি।’ (নাসায়ি: ১০৭২)

সুতরাং শরীরের হক নষ্ট না করার স্বার্থে এবং সুস্থতা ধরে রাখার জন্য রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া উচিত। মুমিন বান্দার জন্য জলদি ঘুমানোর সবচেয়ে বড় উপকার হলো- ভোরে আল্লাহর ইবাদত ও জিকির করার সুযোগ। তাহাজ্জুদ, ফজরের নামাজ জামাতে পড়তে অসুবিধা হয় না রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে গেলে। এছাড়া হাদিস থেকে জানা যায়, দিনের প্রথমাংশকে আল্লাহ তাআলা বরকতপূর্ণ করেছেন। ভোরে ঘুম থেকে উঠা

নবীজি (স.) আল্লাহর কাছে ভোরবেলাকে বরকতময় করার জন্য দোয়া করেছেন। ভোরবেলাকে খুবই গুরুত্ব দিতেন সলফে সালেহিনরা। যারা ভোরের বরকত নিয়ে আলসেমি করত তাদের ব্যাপারা তাঁরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা: ৫/২২২)

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মাআদ: ৪/২৪১)

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত আহার করা ও মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়াও হার্ট অ্যাটাকের কারণ। এই দুইটি অভ্যাসের ব্যাপারেও নবীজি উম্মতকে সতর্ক করেছেন। সুতরাং হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে রাতে জলদি ঘুমানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত আহার ও মেজাজ হারানোর ব্যাপারেও সাবধান হওয়া উচিত।

জীবনের বরকতও এসবের মধ্যে নিহিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতে জলদি ঘুমানোর তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments