পরনিন্দা বা গিবত ঘৃণিত অভ্যাস। বর্তমান সমাজের প্রতিটি মজলিসে, ঘরে ঘরে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই ঘৃণ্য অভ্যাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। অধিকাংশ আড্ডা আজ গিবতে পূর্ণ। সাধারণ মানুষ দূরের কথা, অনেক দ্বীনদার-পরহেজগারও এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুমাজাহ: ০১)
গিবত শোনাও গিবত করার মতোই মারাত্মক অপরাধ। হাদিসের ভাষায় ‘গিবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম-৬৪৮৭)
যেই আসরে গিবতের চর্চা হয়, সেই আসর বর্জন করা জরুরি। আপনার সামনেই যদি কেউ কারো গিবত করে তখন আপনার দায়িত্ব হলো- তাকে থামতে বলুন, আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনোভাবেই গিবত শোনা যাবে না।
মূলত গিবত হোক বা যেকোনো পাপ হোক, পাপিকে থামিয়ে দেওয়া মানে তার উপকার করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালেম হোক বা মজলুম। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! মজলুমকে তো আমরা সাহায্য করে থাকি। কিন্তু জালেমকে কীভাবে সাহায্য করব? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তার দুহাতে ধরে রাখবে। (বুখারি: ২৪৪৪)
এই হাদিস বলে দিচ্ছে, জালেমকেও সাহায্য করার পথ আছে। সেটি হলো গুনাহ থেকে তাকে বাধা দেওয়া। যদি নিষেধ করা না যায়, তাহলে ওই স্থান ত্যাগ করতে হবে। এটিই ইসলামের শিক্ষা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি আনুগত্য করবেন না প্ৰত্যেক এমন ব্যক্তির যে অধিক শপথকারী, লাঞ্ছিত, পেছনে নিন্দাকারী, যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা কালাম: ১০-১১)
আল্লাহ বলছেন, ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়েদা: ২)
মনে রাখতে হবে, পবিত্র কোরআনে গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে যে কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে; অন্য কোনো গুনাহের ক্ষেত্রে ততটা রুক্ষভাষা ব্যবহার করা হয়নি। ইরশাদ হয়েছে ‘তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না, পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়াকে পছন্দ করো? অবশ্যই তোমরা তা পছন্দ করবে না।’ (সুরা হুজরাত: ১২)
প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন আমাকে মেরাজে নেওয়া হলো, সেসময় এমন কিছু মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, যা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশ খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি প্রশ্ন করলাম, এরা কারা? (হে জিবরাইল!) তিনি বললেন, এরা ওইসব লোক যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত অর্থাৎ গিবত করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।’ (রিয়াজুস সালেহিন: ১৫৩৪)
প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে মুসলিম ভাইয়ের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করার শিক্ষা দিয়েছেন। গিবতের মাধ্যমে কাউকে অসম্মান, বেইজ্জতি কিংবা ছোট করা ইসলামি শিক্ষার পরিপন্থী। তাই ভাইয়ের গিবত নয়, বরং ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করতে হবে। নবীজি (স.) বলেছেন, যে কেউ কোন মুসলিমের সম্মান-ইজ্জত-আব্রু নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার মুখমণ্ডল থেকে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। (তিরমিজি: ১৯৩১; মুসনাদে আহমদ: ৬/৪৫০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরনিন্দা করা ও শোনা থেকে হেফাজত করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন ও সমাজ গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।