সারাবিশ্বে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে খাবারের দাম ছিল বিগত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই সময়ে ভোজ্যতেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও)।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এফএওর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্যের মাসিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে এফএও প্রকাশিত খাদ্য মূল্যসূচকে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে সার্বিকভাবে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ। ২০২৩ সালের অক্টেবরে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের যে দাম ছিল, তার তুলনায় চলতি ২০২৪ সালের অক্টোবরে তা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ২০২২ সালের মার্চ মাসের তুলনায় সাড়ে ২০ শতাংশ কম আছে এখনও।
ফাওয়ের তথ্য অনুযায়ী, মাংস ব্যতীত প্রায় সবধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। অক্টোবরে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রধানত পাম, সয়াবিন, সূর্যমুখী ও রেপসিড তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনটা ঘটেছে।
‘সিরিয়াল’ বা শিশুদের প্যাকেটজাত দানাদার খাবারের মূল্যসূচক অক্টোবর মাসে দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। মূলত গম ও ভুট্টার রফতানি মূল্য বাড়ার কারণে এমনটা হয়েছে। বিশ্বের প্রধান রফতানিকারক দেশ রাশিয়ায় প্রতিকূল আবহাওয়া ও কৃষ্ণসাগরে আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়েছে।
এদিকে, ব্রাজিলে নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পরিবহন সমস্যার ফলে দেশীয় চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ভুট্টার দামও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এর বিপরীতে এফএও সব ধরনের চালের মূল্যসূচক অক্টোবর মাসে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। ভারতের চাল রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে এই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এফএওর চিনির মূল্যসূচক ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ব্রাজিলে ২০২৪-২৫ মৌসুমে দীর্ঘ খরার কারণে আখের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় এমনটা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধিও আখের একটি অংশকে ইথানল উৎপাদনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে উৎপাদন তুলনামূলক কম হওয়ায় চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলিয়ান রিয়াল দুর্বল হওয়ায় এই বৃদ্ধির হার কিছুটা সীমিত।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থার দুগ্ধজাত খাদ্যের সূচক অক্টোবর মাসে ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গড়ে ২১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে পনির ও মাখনের মূল্যবৃদ্ধি এর মূল কারণ, যদিও গুঁড়ো দুধের সূচক কমেছে।
সাধারণ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার বিপরীতে, এফএওর সূচকে মাংসের দাম সেপ্টেম্বরের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাপী মুরগির মাংসের দাম সামান্য কমেছে, তবে ভেড়ার মাংসের দাম স্থিতিশীল ছিল। এর বিপরীতে গরুর মাংসের দাম কিছুটা বেড়েছে।