Monday, May 20, 2024
HomeUncategorizedসন্তানহারা বাবা-মায়ের মর্যাদা ও পুরস্কার

সন্তানহারা বাবা-মায়ের মর্যাদা ও পুরস্কার

সন্তান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামত তিনি যাকে ইচ্ছা দেন; ইচ্ছা হলে ফিরিয়ে নেন। সবই তাঁরই ইচ্ছাধীন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দেন অথবা কাউকে পুত্র ও কন্যা সন্তান উভয়ই দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন, তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সুরা শুরা: ৪৯-৫০)

সন্তানের মৃত্যু একজন বাবা-মায়ের জন্য সীমাহীন কষ্টের। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে সন্তানহারা মা-বাবার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার ও সম্মাননা।

মৃত সন্তানেরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো

আবু হাসসান (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, ‘আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আপনি কি রাসুল (স.) থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমার অন্তর সান্ত্বনা পায়? আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হ্যাঁ, আমি নবী কারিম (স.)-কে  বলতে শুনেছি, ‘ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানেরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তারা যখন বাবা অথবা বাবা-মায়ের উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধেয় কাপড় কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরেছি। এরপর সেই কাপড় বা হাত আর ছাড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন। (মুসলিম: ৬৩৭০)

মা-বাবার জান্নাতে যাওয়ার কারণ
শৈশবেই মৃত্যুবরণ করা শিশুরা মা-বাবার জান্নাতে যাওয়ার কারণ হয়ে থাকে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (স.) বলতে শুনেছি, ‘শিশু (অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী) মুসলিম সন্তানেরা জান্নাতের ‘শিশু খাদেম’ হবে। তারা তাদের মাতা-পিতাকে পেলে কাপড় ধরে টেনে জান্নাতে না নেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না।’ (মেশকাত: ১৭৫২)

মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের অর্থাৎ মা-বাবার তিনটি সন্তান (তাদের আগে) মারা যাবে, আল্লাহ তাদেরকে নিজের রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, দুজন মারা গেলেও কি এমন প্রতিদান পাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, দুজন মারা গেলেও। এবার সাহাবিরা বললেন, একজন মারা গেলেও কি এমন প্রতিদান পাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, একজন মারা গেলেও। অতঃপর রাসুল (স.) বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, যদি কোনো নারীর গর্ভপাত হয় এবং ওই মা ধৈর্য্য ধরে ও সওয়াবের আশা করে, তাহলে সন্তানও তাঁর নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬০৯, মুসনাদে আহমদ: ২২০৯০)

জান্নাতে বিশেষ বাড়ি নির্মাণ

সন্তানহারা ধৈর্যশীল মা-বাবা জান্নাতে বিশেষ বাড়ি লাভ করবেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন কারও সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা তার কলিজার টুকরোর জান কবজ করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলেন, আপনার বান্দা এই বিপদেও ধৈর্য্য ধারণ করে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েছে। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করো এবং এর নাম দাও ‘বাইতুল হামদ’ তথা ‘প্রশংসার ঘর।’ (তিরমিজি সূত্রে রিয়াজুস সালেহিন: ১৩৯৫)

জান্নাতের দরজায় সন্তান অভ্যর্থনা জানাবে
সন্তান জান্নাতের দরজায় বাবা-মাকে অভ্যর্থনা জানাবে। কুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবি রাসুল (স.)-এর কাছে নিয়মিত আসতেন। তাঁর সঙ্গে ছোট্ট একটা বাচ্চাও থাকত। রাসুল (স.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি তোমার ছেলেকে ভালোবাসো? তিনি বললেন, আমার ছেলেকে আমি যতটুকু ভালোবাসি আল্লাহ আপনাকে তেমনি ভালোবাসেন। পরবর্তীতে ছেলেটি মারা যায়। রাসুল (স.) ছেলেটিকে দেখতে না পেয়ে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। ওই ছেলের মুত্যুর খবর জেনে মহানবী (স.) তাঁর বাবাকে বলেন, তুমি কি আনন্দিত নও যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়েই তুমি প্রবেশ করবে, সেখানে ছেলেকে তোমার জন্য দরজা খোলার চেষ্টা করতে দেখতে পাবে।’ (সুনানে নাসায়ি: ২০৭০)

মৃত শিশুরা ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে থাকে
শৈশবেই মা-বাবাকে ছেড়ে চলে যাওয়া শিশুরা জান্নাতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে থাকে। ইবরাহিম (আ.) তাদের দেখাশোনা করবেন। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদিসে রাসুল (স.) মেরাজের ঘটনার বর্ণনায় বলেছেন, ‘আমরা চলতে চলতে একটা সজীব শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম। তাতে বসন্তের বিচিত্র ফুলের সমাহার আছে। বাগানের মধ্যে দীর্ঘকায় একজন পুরুষকে দেখলাম। তবে তাঁর মাথা আমি দেখছিলাম না। তাঁর চতুর্পাশে বিপুল সংখ্যক ছেলে-মেয়ে দেখলাম। এত বেশি ছেলে মেয়ে আমি কখনও দেখিনি। আমি ফেরেশতাদের বললাম, ওনি কে? আমাকে বলা হলো, ইনি ইবরাহিম (আ.)। আর তাঁর আশপাশের ছেলে-মেয়েরা ওইসব শিশু, যারা শৈশবের নিষ্পাপ অবস্থায় মারা গেছে।’ (সহিহ বুখারি: ৪২৯)

সন্তান বিয়োগের কঠিন পরীক্ষায় ব্যথিত ও মর্মাহত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর ধৈর্যধারণ করা মুমিনদের কর্তব্য। এতেই রয়েছে কল্যাণ ও মহাসাফল্য। আল্লাহ তাআলা সন্তানহারা মা-বাবাদের আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments