Tuesday, July 1, 2025
HomeScrolling৫০ বছরে এমন দিন দেখেনি ইসরায়েল

৫০ বছরে এমন দিন দেখেনি ইসরায়েল

শনিবার ইসরায়েলে ছিল ছুটির দিন। স্বাভাবিকভাবেই দিনটির শুরুটা কর্মব্যস্ত ছিল না। এমন দিনে পরিকল্পনামাফিক মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালায় অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেড। হামাসের এমন হামলা ইসরায়েলকে ১৯৭৩ সালের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সেই আক্রমণের ৫০তম বার্ষিকীতে হামলা চালায় হামাস।

আরও অবাক করা বিষয় হলো- হামাসের এমন বড় ধরনের হামলার কোনো খবর ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না। সে কথা স্বীকারও করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, হামাসের এমন হামলা তাদেরকে অবাক করেছে। খবর আনাদুলু এজেন্সির

ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরায়েলের একটি বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এছাড়া কোনো খবর না থাকায় ইসরায়েল এমন হাজার হাজার রকেট হামলা মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিল না।

শুধু রকেট হামলায় থেমে থাকেনি হামাস। স্থলপথেও আক্রমণ করে তারা। গাজা উপত্যকার আশেপাশের শহরগুলোতে স্থল অভিযান শুরু করে তারা।

israel_gaza
ইসরায়েলের সীমান্ত বেড়া ভেঙে ফেলেছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: আনাদুলু এজেন্সি

এই অভিযান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সময় মিশর এবং সিরিয়া ইয়োম কিপপুরে সামরিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে অবাক করে দিয়েছিল। সেটিও ছিল ইসরায়েলে একটি সরকারি ছুটির দিন। ওই যুদ্ধে আড়াই হাজারের বেশি ইসরায়েলি নিহত হন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাস ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকদের বিরুদ্ধে আকস্মিকভাবে মারাত্মক হামলা শুরু করেছে। আমরা এর প্রতিশোধ নেব।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো স্পষ্টভাবে সেখানকার সরকার ও গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছে। হিব্রু মারিভ নিউজ জানিয়েছে, ‘আপাতদৃষ্টিতে, কিছু প্রাথমিক ইঙ্গিত সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা সংস্থা হামাসের আক্রমণে বিস্মিত হয়েছিল।’

সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ‘ইসরায়েলি গোয়েন্দারা সপ্তাহান্তে হামাসের অভিযানের কিছু লক্ষণ শনাক্ত করেছিল। তবে তারা এটিকে গুরুত্বসহকারে নেয়নি।’

মারিভ নিউজ ছাড়াও ইয়েদিওথ আহরোনোথ সংবাদপত্রও এই ঘটনাকে ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছে। তারা মনে করছে, এটি ইসরায়েল সরকারের বড় ব্যর্থতা।

ইয়েদিওথ আহরোনোথ উল্লেখ করেছে যে, ১০৭৩ সালের অক্টোবরের যুদ্ধের ৫০ বছর পর এই হামলা চালানো হয়েছিল।

ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষক আভি বেনায়াহু বলেন, ‘ইসরায়েল একটি অপ্রত্যাশিত কঠিন যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। গোয়েন্দা ব্যর্থতা এটিকে বিপজ্জনক এবং চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ইসরায়েল বিলিয়ন শেকেল দিয়ে যে প্রাচীর তৈরি করেছিল তা ভেঙে পড়েছে। আমি বিস্ময়ে চোখ ঘোষছি, কারণ ইসরায়েলের ইতিহাসে এমন কিছু ঘটেনি।

টাইমস অফ ইসরায়েল পত্রিকার লেখক ডেভিড হোরোভিটস যা ঘটেছে সেটিকে ‘একটি বিশাল ব্যর্থতা’ বলে বিবেচনা করেছেন।

israel_gaza_1
ইসরায়েলের সামরিক যানের ওপর ফিলিস্তিনিদের উল্লাস। ছবি: ইপিএ/আল জাজিরা

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘আল আকসা ফ্লাড’ অভিযান পরিচালনা করছে হামাস। শনিবার অবরুদ্ধ গাজা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। প্রথম ২০ মিনিটে ৫ হাজারের বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করে হামাস। এই হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি।

সবচেয়ে বেশি যে বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে তা হলো, ইসরায়েলের কথিত ‘নিরাপত্তাব্যবস্থার সক্ষমতা’। চ্যানেল-১২ টিভির এক আলোচনায় সংবাদ উপস্থাপক ড্যানি কুশমারোর দাবি, ‘আমরা গাজার সঙ্গে যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি, তা আগে জানতাম না! কোথায় আইডিএফ, কোথায় পুলিশ, কোথায় নিরাপত্তা?’

ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবেক আইডিএফ গোয়েন্দাপ্রধান আমোস ইয়াডলিন বলেন, ‘এই আক্রমণ নিঃসন্দেহে বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে শান্ত থাকতে হবে।’

শনিবার (৭ অক্টোবর) গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে আকস্মিক হামলা চালায়। এ সময় তারা বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাকে আটক করেন বা গুলি করে হত্যা করেন। এছাড়া অবৈধ বসতিস্থাপনকারী বেসামরিক অনেক মানুষকেও আটক করা হয়। গাজা ভূখণ্ড থেকে আকস্মিক ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট এসে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরিত হতে শুরু করলে দিশাহারা হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। রকেট হামলার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে সাইরেন বাজতে থাকে।

হামাসের হামলার পর ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা করে এবং গাজায় পাল্টা হামলা চালায়। দুই পক্ষের হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে।ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনও অনেক এলাকা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments