২০২১ সালের আজকের দিনে ভয়াবহ নৌকা ডুবি ঘটলো পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে। সে ঘটনায় প্রাণ হারায় ৭২ জন মানুষ। সেদিন তারা দুপুরে বোদেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দিরে মহালয়া পূজায় অংশ নিতে মাড়েয়ার আউলিয়া ঘাটে নৌকায় উঠেছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে মাঝপথে ডুবে ঘটে স্মরণকালের মর্মান্তিক ঘটনা। একের পর এক লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্তম্ভিত করে তোলে পুরো দেশকে।
এ ঘটনার পর সেই ঘাটে দ্রুত সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন বর্তমান রেলমন্ত্রী। তবে এখনো আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। ফলে ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হতে হচ্ছে দুই পারের মানুষদের। দ্রুত সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি স্থানীয়দের।
বিগত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর শতাধিক যাত্রী নিয়ে করতোয়া নদীর এই ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোট ৭২ জন নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে ৭১ জনের মরদেহ বিভিন্ন সময় উদ্ধার হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন একজন। ৭২ জনের মধ্যে ৭১ জনই ছিলেন সনাতন ধর্মের।
জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বোদেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দিরে প্রতিবছরের মত দুর্গোৎসবের ৫ দিন পূর্বে মহালয়া উৎসব উপলক্ষে ধর্মসভার আয়োজন ছিল। ওই সভায় বিভিন্ন এলাকার প্রচুর সনাতন ধর্মের অনুসারীদের সমাগম ছিল। বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের এই মন্দিরে সড়ক পথে যাতায়াত সুবিধা না থাকায় কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের ভরসা ছিল করতোয়া নদীর এই আউলিয়া ঘাট। সেদিন এত সংখ্যক সনাতনী নৌকাযোগে মূলত মন্দিরেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার কারণে নৌকাটি মাঝ নদীতে তলিয়ে যায়। মুহূর্তেই করতোয়া পাড় হয়ে যায় মৃত্যুপুরি।
এদিকে, নৌকাডুবির কয়েকদিন পর এই এলাকার সংসদ সদস্য ও বর্তমান রেলপথ মন্ত্রী অ্যাড. নুরুল ইসলাম সুজন মৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান শেষে বক্তব্যে বলেছিলেন, আউলিয়া ঘাটে আগামী বছরেই সেতু নির্মাণকাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে বিষয়টির সক্ষমতা যাচাই করে একনেকে বিল পাস হয়েছে। সারাদেশে এই প্রকল্পের আওতায় ২৮টি সেতু নির্মাণ করা হবে।
এদিকে, রেলপথ মন্ত্রীর আশ্বাসের এক বছর হয়ে গেলেও সেতু নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় আক্ষেপের শেষ নেই স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে দুইটি ইউনিয়ন করতোয়ার অপরপ্রান্তে। ফলে বড়শশী ও কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা শহরে যেতে নৌকাই ভরসা। যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে করতোয়া নদীর এই ঘাটে একটি সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের।
স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গত ১৫ বছর ধরে এই ঘাটে সেতু নির্মানের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ ওয়াই আকৃতির সেতু নির্মাণের কথা বললেও বাস্তবায়নের খবর নেই। নৌকাডুবির মত এমন দুর্ঘটনার পুণরাবৃত্তি হোক— এমনটা চান না তারা। জনচলাচলের গুরুত্বপূর্ণ এই ঘাটে দ্রুত একটি সেতু নির্মানের দাবি তাদের।
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকেই শুনতেছি এই ঘাটে সেতু হবে, কিন্তু হয়নি এখনও। আগের এমপিও আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম সুজন ১৫ বছর ধরে দায়িত্বে আছেন। প্রতিবার ভোটের সময় বলেন, এবার হবে। কিন্তু হলো কই? এখন মন্ত্রী হিসেবে আছেন, গতবছর আশ্বাসও দিলেন। তারপরও কাজ শুরু হলো না। আবার ভোট চলে আসতেছে, এবারও হবে কি-না কে জানে।
স্থানীয় সমাজসেবক সারোয়ার হোসেন বলেন, একটি সেতু থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা হয়তো ঘটতনা এখানে। বারবার যেহেতু আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, আশাকরি এই ঘাটে সেতু হবে। তবে দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
নৌকা যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, বড়শশী এবং কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। এখানে সেতুর অভাবে পথচারিদের যেমন সময় অপচয় হয়, তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হয়। একটি সেতু হলে সব কিছু সহজ হতো।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, আউলিয়া ঘাটে সেতু নির্মাণের দরপত্র মূল্যায়ণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির এই সেতুটির নির্মাণ কাজ অল্পদিনের মধ্যেই শুরু হবে। সেতুটি হলে স্থানীয় মানুষের জনদুর্ভোগ অনেকটাই কমে আসবে।