Thursday, May 16, 2024
HomeScrollingইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হবে রাত ৮টার পরে

ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হবে রাত ৮টার পরে

অনলাইন ডেস্ক |

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশটির বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণের সময় আরও পিছিয়ে গেল। এমনকি ইমরান খানও এখনো আসেননি সংসদে।

পাকিস্তান সংসদের সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, অধিবেশন দেরীতে শুরু হওয়ায় ইফতারের পর রাত ৮টার দিকে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারণে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন প্রায় ২ ঘন্টা সময় ধরে মুলতবি থাকার পর আবার শুরু হয়েছে।

সংসদের অধিবেশন বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হলেও বিরোধী দল ও সরকারি সদস্যরা একটি বৈঠকে বসার কারণে তা বিলম্বিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ পর তা মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। পরে মুলতবি হয়ে যাওয়া অধিবেশন দুপুর আড়াইটায় আবার শুরু হয় এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি তার বক্তব্য শুরু করেন।

এর আগে, সংসদের স্পিকার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত করলেও তা আরও বেশি সময় ধরে বিলম্বিত হয়।

অভিযোগ উঠেছে, অধিবেশন ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হয়েছে এবং ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মন্ত্রীরা তাদের বক্তৃতা দীর্ঘ করার চেষ্টা করছেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও নির্ধারিত সময়ে সংসদে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত না হওয়ায় ইমরান খানের সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে পাকিস্তানে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তিনি বিরোধীদের মুখোমুখি হবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে আজ শনিবার (৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা) পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত বৃহস্পতিবারের রায়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন, ভোটাভুটিতে কোনোভাবেই দেরি করা যাবে না। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত সময় অনুষ্ঠিত হয়নি এই ভোটগ্রহণ।

আজ শনিবার সকালে অধিবেশন শুরু করে কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্কের পরেই স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করেন পার্লামেন্টের স্পিকার আসাদ কায়সার।

স্পিকারের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে পাকিস্তানের সংসদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আহমেদ বিলাল মেহবুব বলেন, অধিবেশন মুলতবি রাখার যৌক্তিকতা বোঝা কঠিন। তাও আবার দেড় ঘণ্টা সময় ধরে! এখন রোজার মাস হওয়ায় দুপুরে খাবারের বিরতি হতে পারে না, এমনকি নামাজের সময়ও নয়। আমি পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছি এবং বলতেই হবে, এ বিষয়ে চিন্তিত।

দেশটির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মীর বলেছেন, ‘সংসদের অধিবেশন মুলতবি হওয়ার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি ভাষণ দিচ্ছিলেন। তার ভাষণ শেষ হওয়ার আগেই অধিবেশন স্থগিত করা হয়। বিরতির পর তিনি আবারও ভাষণ শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা কথা বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন’।

এদিকে, আজ অনাস্থা ভোট যাতে অনুষ্ঠিত না হয় সেজন্য অধিবেশন দীর্ঘায়িত করার সরকারের পরিকল্পনার পাল্টা কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে বিরোধীদলীয় নেতা শেহবাজ শরিফের চেম্বারে পরামর্শক বৈঠক করেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। সংসদের অধিবেশনের বিরতির সময় এই বৈঠক করেছে তারা।

পরে সরকারি ও বিরোধী দল সংসদে শৃঙ্খলা বজায় এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে বক্তৃতা দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। হামিদ মীর বলেন, এ বিষয়ে আসাদ কায়সারের চেম্বারে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদেরও আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘উভয় পক্ষই সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে এবং বক্তৃতার সময় কেউ হস্তক্ষেপ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আজ রাত ৮টার পরে সংসদে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন শাহ মাহমুদ কুরেশি’।

সকালে অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার আসাদ কায়সার বলেন, তিনি পার্লামেন্টে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ নিয়ে বিতর্ক চান। তার এ ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন বিরোধীরা। তাদের দাবি, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে যথাসময়ে অনাস্থা ভোট হতে হবে।

এরপর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি বক্তব্য শুরু করলে পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ডেপুটি স্পিকার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করেননি। বরং ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ পরিপ্রেক্ষিতে অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা দরকার ছিল।

তার এ কথায় পার্লামেন্টের ভেতর তুমুল স্লোগান দিতে শুরু করেন বিরোধীরা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধন রয়েছে বলে ইমরান খান যে অভিযোগ তুলেছেন, তার কোনো সত্যতা নেই।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরানের অভিযোগ খারিজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জালিনা পোর্টার।

এক প্রশ্নের উত্তরে জালিনা পোর্টার বলেন, ‘আমি একদম সরাসরি ও স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, এই অভিযোগের মধ্যে কোনো সত্যতা নেই। পাকিস্তানের সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই’।

ইমরান খানের এই অভিযোগের সত্যতা নেই বলে দাবি করলেও সংবাদ সম্মেলনে জালিনা পোর্টার বলেন, ‘পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণে আছে। অবশ্যই আমরা পকিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন আমাদের রয়েছে। তবে আমি আবারও বলছি, যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে- তা সত্য নয়’।

প্রসঙ্গত, ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা না থাকা নিয়ে চরম রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। ইমরানের দাবি, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ও বিদেশিরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন ইমরানসহ অনেকেই।

এমনকি রাশিয়াও অভিযোগ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবাধ্য’ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শাস্তি দিতে চেয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইমরান খানের বিরোধীদের অর্থায়ন করে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তার সরকার পতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইমরান খানের বিরোধীদের দাবি, ২০১৮ সালে সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। এখন তাঁর মাথার ওপর থেকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছায়া সরে গেছে। যদিও কোনো পক্ষই বিষয়টি স্বীকার করে না।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে কোনও প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের ক্ষমতার পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে পারেননি। কখনও খুন হয়ে, আবার কখনও বিরোধী দলের অনাস্থার মুখে পড়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীদের।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments