কোনোভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে বড় ধাক্কা ১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ। ফলে নিট রিজার্ভ ১৯.৮৩ থেকে ১৮.২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। গত ১০ বছরের মধ্যে রিজার্ভের এই পরিমাণ সর্বনিম্ন। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ানোর পর আর কখনো নিচে নামেনি।
সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আঞ্চলিক দেশগুলোর লেনদেনের নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম হলো আকু। তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার সদস্য দেশ হলো ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। সদস্য দেশগুলো প্রতি দুই মাস অন্তর অর্থ পরিশোধ করে। আকু পেমেন্ট করার পর সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। প্রতি দুই মাসের দায় পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে গত দুই বছর ধরে আমদানির পরিমাণ ব্যাপক পরিমাণে কমেছে। অন্যদিকে ডলার আসার (আন্তঃপ্রবাহ) তুলনায় বেশি চলে যাওয়ার (বহিঃপ্রবাহ) বেশি হওয়ার কারণে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাসের জন্য আগের মাসের তুলনায় আকুর পেমেন্ট বেশি করতে হয়েছে। কারণ হচ্ছে রমজান ও ঈদের কারণে বেশ কিছু পণ্যের আমদানি বেড়ে গেছে।
এ বিষয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রিজার্ভের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ১৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন হলেও তার পূরণ নিয়ে সংশয় থাকবে। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রিজার্ভ কমছে। এক মাসে তা বাড়ার তেমন কোনো শুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কেনান, দেশের রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রা যেসব উৎস থেকে আসে ও ব্যয় হয়, এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য নেই। ফলে রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছিল না। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। তবে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বর শেষে তা লক্ষ্যমাত্রা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ১৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার এবং জুন শেষে তা ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসের রেকর্ড ৪৮ বিলয়নের ডলার ছিল। মাত্র আড়াই বছরে গ্রেস রিজার্ভ নেমে আসে ২৩ বিলিয়নের ঘরে। আর ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় সোয়া ১৩ বিলিয়ন ডলারে।