বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের কম্পাউন্ডে ব্যানার সরানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পুলিশ-আনসার সদস্যসহ আওয়ামী লীগের প্রায় ৩৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ দলটির অনেক নেতা-কর্মী দাবি করেন, এ ঘটনায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু মেয়র জানান, তিনি গুলিবিদ্ধ হননি।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের থানা কাউন্সিল এলাকার বরিশাল সদর উপজেলা কম্পাউন্ডে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
এ ঘটনায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুসহ বেশ কয়েকজন আটক হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ব্যানার সরাতে যায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা তাদের সকালে আসতে বলে। এরপরও তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে উপস্থিত আনসার সদস্যরা তাদের বাধা দেন। এতে হট্টগোল বেঁধে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেই সঙ্গে দফায় দফায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ ফাঁকা গুলি ছোড়েন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা।
এ দিকে মেয়রের ওপর হামলার খবর পেয়ে ছাত্রলীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা থানা কাউন্সিলের প্রধান ফটকে এসে জড়ো হয়। পরে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দিকে ইট পাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধরা বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে অবস্থান নিলে সেখান থেকেও তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনীবুর রহমান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বেশ কয়েকজন লোক কম্পাউন্ডের মধ্যে প্রবেশ করে। সেখানে থাকা আনসার সদস্যরা তাদের ভেতরে আসার কারণ জানতে চায়। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন গেটের ভেতরে ঢুকে ব্যানার খোলার কথা বলেন। আমি তাদের সকালে আসতে বলি।
আরও বলেন, এ সময় গেটে বেশ কয়েকজন লোক ছিল। পরে আমার বাসায় সামনে ৬০ থেকে ৭০ জন লোক দেখে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা ভয়ে বাসার ওপরে চলে আসে। আমার বাসার গেটে ভাঙচুর করে তারা। এর মধ্যে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু পরিচয়ে একজন বাকি ভেতরে আসে। বিষয়টি দেখতে আমি নিচে নামলে তারা আমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও একপর্যায়ে আমাকে ঘিরে ধরে। আমি বুঝতে পেরে ওপরে ওঠার চেষ্টা করি। এ সময় আনসার সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আর আমি নিজেই ওই হাসান মাহমুদ বাবুকে ধরে ফেলি আর আনসার সদস্যদের হাতে তুলে দেই।
তিনি বলেন, এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছিল যে আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না। আমার বাবা-মা দুজনেই করোনা আক্রান্ত। ওরা তাদেরও গালিগালাজ করেছে। তারা আমার ওপর হামলা চালানোর জন্য বাসার নিচের রুম পর্যন্ত চলে আসে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে উত্তেজিতদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কত রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে সে বিষয়ে পরে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই ঘটনায় হাসান মাহমুদ বাবুসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেনি পুলিশ কমিশনার।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের বিনয়ের সঙ্গে সকালে আসতে বলেছিলেন। এটি তারা তোয়াক্কা না করে অপমান করার চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি আমাদের জানালে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত।
এ দিকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেটুকু জানিয়েছেন, তার বাসভবন এলাকায় কিছু লোক ব্যানার খুলতে আসে। কিন্তু সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতের বেলা এভাবে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন তিনি। সেসময় আগত লোকদের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডা হয় এবং তারা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধ অমান্য করে বাসভবনে প্রবেশ করতে উদ্যত হন। এ সময় নিরাপত্তার খাতিরে দায়িত্বরত আনসার বাহিনী গুলি ছোড়ে।
পরে খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ সময় একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ ছাড়া ইউএনও দাবি করেছেন তার বাসভবনে দায়িত্বরত কয়েকজন আনসার সদস্যও আহত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ময়লা ও গাড়ি দিয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কটি অবরোধ করা রাখা হয়েছে। সেগুলো সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেমরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে আমি বিসিসি’র কর্মীদের বলেছি সকল ধরনের পোস্টার, ব্যানার খুলে ফেলতে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ওরা বরিশাল সদর উপজেলা কম্পাউন্ডে যায়। কিন্তু সদর উপজেলার ওই স্থানটি তো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসা না। তিনি নাকি ওদেরকে গালিগালাজও করেছে। পরে সিটি করপোরেশন ও আমার দলের সিনিয়র নেতা-কর্মীরা সেখানে গেলে আনসার সদস্যরা তাদের ওপর গুলি করে। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং নিজে মেয়র পরিচয় দেওয়ার পরও আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়তে থাকে। তবে আমি গুলিবিদ্ধ হইনি। আমার সঙ্গে থাকা নেতা–কর্মীরা আমাকে জড়িয়ে রাখে। পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি। এখন বাসায় এসে জানতে পারলাম আমার অনেক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছে। এমনকি তাদের নাকি আটকও করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার একটি তদন্ত করে যে দোষী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা এই ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেব।