Thursday, April 25, 2024
HomeScrollingরাশিয়ার যে সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দেবে

রাশিয়ার যে সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দেবে

অনলাইন ডেস্ক।।

কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানি নিয়ে ইউক্রেইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে হওয়া চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। কৃষ্ণ সাগরের রুশ নৌবহরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার অভিযোগ তুলে রাশিয়া এ পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট লাঘবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয় ওই খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি।

শনিবার কৃষ্ণ সাগরে ক্রিমিয়া উপকূলের সেভাস্তোপোলে রুশ নৌবহরের জাহাজগুলোতে চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলা চালানো হয়। আর সেই কারণেই শস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাজ্যের সহায়তায় ইউক্রেইন ওই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে বলেও রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে। এতে শস্য রপ্তানিতে নিয়োজিত জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

তবে ইউক্রেইন এ হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করে বলেছে, রাশিয়া তাদের নিজেদের অস্ত্র সাবধানে ব্যবহার করতে পারেনি।

গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় শস্য রপ্তানি চুক্তি সই করে ইউক্রেইন ও রাশিয়া। এরপর ইউক্রেইন থেকে ৯০ লাখ টন গম, সূর্যমুখী পণ্যসহ ভোজ্য তেল রপ্তানি করা হয়েছিল।

এ চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেইনে রপ্তানির জন্য আটকা পড়ে থাকা শস্য প্রথম রপ্তানি করা শুরু হয় এবং বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দাম কমে আসে। এখন রাশিয়া সেই চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ায় বিশ্বে ইউক্রেইনের শস্য রপ্তানির এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার মুখে পড়ল। এবং এতে বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে কৃষ্ণসাগর অবরোধ করেছিল রাশিয়া। তাতেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দামে উল্লম্ফন দেখা দেয়। শস্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেইনের ওপর নির্ভরশীল অনেক দরিদ্র দেশে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। এরপরই আন্তর্জাতিক উদ্যোগে হয়েছিল ওই শস্য সরবরাহ চুক্তি।

প্রাথমিকভাবে চার মাসের জন্য করা এ চুক্তির মেয়াদ আগামী ১৯ নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস একদিন আগেই ‍চুক্তিটি নবায়ন করার জন্য রাশিয়াকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই ড্রোন হামলার পর চুক্তির নবায়ন নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হল।

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় ড্রোন হামলারকথা জানানোর কয়েকঘন্টা পর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভ’-এ চলাচল করা কার্গো জাহাজের নিরাপত্তা রাশিয়া নিশ্চিত করতে পারবে না। তাই রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শস্য রপ্তানি চুক্তির বাস্তবায়ন স্থগিত করা হল।

ওদিকে, বৈশ্বিক খাদ্য সংকট লাঘবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক টুইট বার্তায় বলেছেন, কৃষ্ণ সাগর চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করার রুশ সিদ্ধান্ত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শস্য ও সারের প্রধান রপ্তানির পথকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ‘রাশিয়াকে তার সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার শস্য চুক্তি বাতিলের পদক্ষেপকে ‘একেবারে আপত্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা বৃদ্ধি করবে। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মস্কোর বিরুদ্ধে খাদ্যকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শনিবার ভোররাতে ইউক্রেন ১৬টি ড্রোন দিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‌বিশেষজ্ঞরা এই সন্ত্রাসী হামলা সমন্বয়ে সহায়তা করেছে।

রাশিয়া বলেছে, কৃষ্ণ সাগর বন্দর থেকে ইউক্রেনের শস্য করিডোর নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত জাহাজগুলোর একটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, শস্য করিডর থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরের বিস্ফোরণকে উদ্দেশ্যমূলক পদক্ষেপের জন্য মিথ্যা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে মস্কো।

টুইটারে দেওয়া বার্তায় ইউক্রেনের এই মন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়া আগেই এই পরিকল্পনা করেছিল। রাশিয়া অনেক আগেই পুনরায় ‘হাঙ্গার গেম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এখন সেটিকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‌‘নিজেদের স্থাপনায় কাল্পনিক সন্ত্রাসী হামলার’ নাটক সাজানোর অভিযোগ করেছেন।

এছাড়া যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গত মাসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেছে রাশিয়া। শনিবার ব্রিটেন বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মস্কো এই ভুয়া অভিযোগ করেছে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম দুই প্রধান খাদ্য ও জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন ও  রাশিয়ার মধ্যে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বৈশ্বিক এই সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই কিয়েভ এবং মস্কোর কর্মকর্তারা ইউক্রেনে আটকা আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা বিশ্ববাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে তুরস্কে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments