বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে ব্যক্তিগত বিমানে রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দুজন সরকারি কর্মকর্তা এই খবর দিলেও তারা আসাদের গন্তব্যস্থল নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি। এর মধ্য দিয়ে বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান হচ্ছে।
২০১১ সালে কৌশলগত শহর হোমস থেকে আসাদবিরোধী বিদ্রোহের শুরু হয়েছিল। তারা আসাদের সেনাবাহিনীকে হটিয়ে একের পর এক শহর দখলে নিতে থাকলে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাঠে নামে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। ইরানি সেনা ও যোদ্ধারাও আসাদ সরকারকে রক্ষায় সব রকমের সহায়তা দিতে থাকে। বলা হয়ে থাকে, মূলত সিরিয়ায় রাশিয়াকে যুদ্ধে নামিয়েছিলেন প্রয়াত ইরানি কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
রাশিয়ার উপুর্যপরি বিমান হামলা ও ইরানের সহায়তায় সে যাত্রায় রক্ষা পান প্রেসিডেন্ট আসাদ। তবে এবার আর হলো না। দুই সপ্তাহের কম সময়ের অভিযানে পতন হলো দামেস্কের, অবসান হলো আসাদ যুগের। ইতোমধ্যে নিজ বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন সিরিয়ার সেনাপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট আসাদের গন্তব্য নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মিত্র রাশিয়া বা ইরানে যেতে পারেন তিনি।
গত ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল অভিযান শুরু করে। ১২ দিনের মধ্যে একের পর এক শহর দখল নিয়ে তারা রোববার দামেস্ক পৌঁছে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ হোমস শহর দখলে নেওয়ার পরই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ঢুকতে শুরু করেন বিদ্রোহী যোদ্ধারা। মাত্র এক দিনের লড়াইয়ের পরে রোববার ভোরে হোমসের মূল শহরটির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায় বিদ্রোহীরা। এখন তারা রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। ইতোমধ্যে দামেস্কের উপকণ্ঠে গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই মধ্যে খবর এসেছে দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার বিদ্রোহী কমান্ডার হাসান আব্দুল ঘানি রোববার ভোরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, দামেস্কের আশেপাশের গ্রামাঞ্চলকে “সম্পূর্ণ মুক্ত” করার জন্য অভিযান চলমান রয়েছে এবং বিদ্রোহী বাহিনী রাজধানীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বিদ্রোহীরা জানিয়েছেন, তারা দামেস্কে ঢুকে পড়েছেন। সেখানে কোনো সেনা মোতায়েন নেই। রাষ্ট্রীয় রেডিও, টেলিভিশন ও বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
বিদ্রোহী নেতা জোলানি নির্দেশ দিয়েছেন কেউ যেন সরকারি কোনো দপ্তর দখল না নেয়। কারও ওপর যেন প্রতিশোধ না নেয়।
সিরিয়া গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তুরস্ক, সৌদি আরব এবং মার্কিন সমর্থিত বিকেন্দ্রীভূত সশস্ত্র বিরোধী দলগুলো আসাদকে চ্যালেঞ্জ করে আসছিল। তবে ইরান ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনের কারণে আসাদের শাসন এতদিন টিকে ছিল।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সংঘাতে জড়িত হওয়া উচিত নয়। তিনি এক টুইটে বলেন, এটি যাদের খেলা তাদের খেলতে দেওয়া উচিত।