‘টাকা ছাড়া মাদারীপুর পাসপোর্ট অফিসে পাওয়া যায় না কোন সেবা। এই সিন্ডিকেটের মুলহোতা এডি মাহমুদুল হাসান ও অফিস সহকারী কামরুল হাসানের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবী তুলে, সচেতন নাগরিক মহলের ব্যানারে দুর্নীতিমুক্ত পাসপোর্ট অফিস চাই শিরোনামে ব্যানার টাঙ্গানো হয়। মাদারীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের গেটের পাশেই অফিসের সীমানার দেয়ালেই এই ব্যানার টাঙ্গিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
সোমবার (১৬ সেপ্টম্বর) সকালে এই প্রতিবাদের ব্যানারটি টাঙ্গানো হয়। সারাদিন ব্যানারটি অফিসের সামনেই ঝুলে থাকতে দেখা যায়। তবে পরের দিন মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই ব্যানারটি আর দেখা যায়নি।
খোজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের স্টাফ ও দালালদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি হয়ে পড়েছে সেবা প্রত্যাশীরা। দূর-দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা বেশির সেবা প্রত্যাশীরাই বাড়তি টাকা দিতে হয়। সেবা প্রত্যাশীরা অফিসের সামনে আসলেই দালালদের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। ফলে তারা বাড়তি টাকা দিয়ে পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে বাধ্য হন।
তাছাড়া দালালরা গ্রাহকদের সাথে চুক্তি হবার পর ঐসব চুক্তিবদ্ধ গ্রাহকদের ফরমে একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে। পরে ফরমে সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়া হয়। সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া অন্য ফরমগুলোতে নানা রকম ত্রুটির অজুহাতে দেখিয়ে ফরম জমা না রেখে ফেরৎ দেয়া হয়। অথচ সেই একই ফরম পুনরায় দালাল ও কর্মরত আনসারদের মাধ্যমে গেলেই জমা রাখা হয়। এতে করে গ্রাহকদের ফরম প্রতি ১২‘শ থেকে ২ হাজার টাকা বাড়তি দিতে হয় সিন্ডিকেট চক্রের হাতে। ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ গ্রাহক এই বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও পাসপোর্ট সংশোধনে নেয়া হয় ৫০ থেকে এক লাখ টাকা। তবে এসব নানা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অনেকটাই কমেছে। এর ফলে মাদারীপুরে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সংখ্যাও গত এক মাস ধরে অনেকগুন বেড়েছে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি চলার কারণে সাধারণ মানুষ এই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যানার টাঙ্গিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। ব্যানারে দুর্নীতিমুক্ত পাসপোর্ট অফিসের দাবীতে মাদারীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান এবং পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী কামরুল হাসানের বিচার ও পদত্যাগের দাবী করে, দুর্নীতিমুক্ত পাসপোর্ট অফিস চাই শিরোনামে পাসপোর্ট অফিসের সামনেই ব্যানার টানিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক মহল। তবে মঙ্গলবার থেকে প্রতিবাদের ব্যানারটি দেখা যায়নি।
নাম না প্রকাশে এক সচেতন ব্যক্তি বলেন, মাদারীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গেলে টাকা ছাড়া মিলে না সেবা। বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া কোন পাসপোর্ট ফরম জমা নেয়া হয় না। কারো নামের বানান ভুল বা প্রবাসী হলে এক একটি পাসপোর্ট থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি এসব অনিয়মের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
মাদারীপুর পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, আসলে গতকাল (সোমবার) অফিস বন্ধ ছিলো। তখন শুনেছি কে বা কারা একটি ব্যানার লাগিয়েছিলো। তবে আজ (মঙ্গলবার) অফিসে এসে আমি ব্যানারটি চোখেও দেখিনি। কে এটি করেছে, আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে মাদারীপুরে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়েছে। বর্তমানে কোন অবস্থাতেই পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে কোন ধরণের বাড়তি টাকা কেউ নেয়না। কেউ বাড়তি টাকা নেয়ার কোন অভিযোগ করলে তা মিথ্যা। বর্তমানে এখানে কোন ধরণের অনিয়ম বা কোন বাড়তি টাকা নেয়া হয়না। সব কিছুই নিয়মমতোই হচ্ছে।
মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারি পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।