Monday, April 29, 2024
HomeScrollingসেহেরির বরকত, নিয়মকানুন সম্পর্কে হাদিসে যা আছে

সেহেরির বরকত, নিয়মকানুন সম্পর্কে হাদিসে যা আছে

সেহেরি খাওয়া সুন্নত। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষরাতে ঊষা উদয়ের আগে যে পানাহার করা হয়, তা-ই সেহেরি। আল্লাহর রাসুল (স.) সেহেরি খাওয়ার জন্য উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বলেছেন, ‘তোমরা সেহেরি খাও। কেননা, সেহেরিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১/৩৫০)

এছাড়াও হাদিস অনুযায়ী ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহেরি খাওয়া।’ (মুসলিম: ১০৯৬; আবু দাউদ: ২৩৪৩)

সেহেরি পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করলেও সেহেরির সুন্নত আদায় হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহেরি করো। কারণ যারা সেহেরি খায়, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/১২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯০১০; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৪৭৬)

তবে, ‘মুমিনের শ্রেষ্ঠ সেহেরি হলো খেজুর।’ (আবু দাউদ: ২৩৪৫; ইবনে হিববান, বাইহাকি ৪/২৩৬-২৩৭, সিলসিলাহ সহিহাহ, আলবানি: ৫৬২)

তাহলে বোঝা গেলো, ক্ষুধা না থাকলেও রোজার উদ্দেশে শেষরাতে সেহেরি খাওয়া বরকতপূর্ণ আমল। অন্তত কয়েকটি খেজুর অথবা পানি দিয়ে হলেও যেন সেহেরি খাওয়া হয়। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সেহরি খাও! যদিও তা এক লোকমা হয়।’ সেহেরি খেলে সুন্নতের অনুসরণ ছাড়াও শারীরিক ফায়দা হয়। যেমন- সেহেরি রোজাদারকে সবল রাখে।

অতিরিক্ত খাওয়া বা উদরপূর্তি করে সেহেরি খাওয়া জরুরি নয়। বরং এতে ইবাদতে আলস্য আসতে পারে। পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

সেহেরি খাওয়ার সময় হলো অর্ধরাতের পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত। সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সেহেরি খাওয়া মোস্তাহাব। এর সময়সীমা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৭)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সকল নবীকে সময় হওয়ার পরপরই (তাড়াতাড়ি) ইফতার করতে এবং শেষ সময়ে সেহেরি খেতে আদেশ করা হয়েছে।’ (আলমুজামুল আওসাত: ২/৫২৬; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৩/৩৬৮)

আমর ইবনে মায়মুন আলআওদী বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম দ্রুত ইফতার করতেন আর বিলম্বে সেহেরি খেতেন।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক: ৭৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯০২৫) তবে, ‘সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়—এত দেরি করা মাকরুহ।’ (ফতোয়া আলমগিরি: খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ২০১)

হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, যায়েদ বিন সাবেত তাঁকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা নবী (স.)-এর সঙ্গে সেহেরি খেয়ে (ফজরের) নামাজ পড়তে উঠে গেছেন। আনাস বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সেহেরি খাওয়া ও আজান হওয়ার মধ্যে কতটুকু সময় ছিল?’ উত্তরে যায়েদ বললেন, ‘৫০ অথবা ৬০টি আয়াত পড়তে যতটুকু লাগে।’(বুখারি: ৫৭৫, ১৯২১; মুসলিম: ১০৯৭, তিরমিজি: ৭০৩)

এক ব্যক্তি ইবনে আববাস (রা.)-কে বলল, ‘আমি সেহেরি খেতে থাকি। অতঃপর যখন (ফজর হওয়ার) সন্দেহ হয়, তখন (পানাহার) বন্ধ করি।’ তিনি বললেন, ‘যতক্ষণ সন্দেহ থাকে ততক্ষণ খেতে থাক, সন্দেহ দূর হয়ে গেলে খাওয়া বন্ধ কর।’ (ইবনে আবি শাইবা, মুসান্নাফ: ৯০৫৭, ৯০৬৭)

আগে সেহেরি খাওয়া হয়ে গেলে; শেষ সময়ে কিছু চা, পানি, পান ইত্যাদি খেলেও সেহেরির ফজিলত অর্জিত হবে। (হেদায়া: খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা-১৮৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজানের প্রত্যেকটি বিষয়ে যথাযথ সুন্নাহ অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments