Thursday, May 9, 2024
HomeScrollingজুমার আগের চার রাকাত সুন্নতের গুরুত্ব

জুমার আগের চার রাকাত সুন্নতের গুরুত্ব

জুমার দ্বিতীয় আজানের আগে চার রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত। যা ‘কাবলাল জুমা’ নামে পরিচিত। জুমার নামাজের আগের এই চার রাকাত সুন্নত হাদিস ও আসার তথা সাহাবা ও তাবেয়িনদের মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) আমল দ্বারা প্রমাণিত। আলি (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ (স.) জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন। (আল মুজামুল আওসাত: ১৬১৭)

উপরোক্ত সনদ বা বর্ণনার সকল বর্ণনাকারী পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য। তবে কেউ কেউ মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আস সাহমির উপর আপত্তি তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে হাদিসের ইমামদের ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত হলো—তিনি সিকাহ তথা বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। তাঁর বর্ণনাসমূহ পরীক্ষা করার পর ইমাম ইবনে আদি (রহ.) বলেন,‘আমার নিকট তার বর্ণনায় কোনো অসুবিধা নেই।’ (আল কামিল: ৬/১৯১-১৯২)

মোল্লা আলি কারি (রহ.) সনদের বিচারে হাদিসের মান সম্পর্কে বলেন, ‘হাদিসটি জায়্যিদ তথা হাসানসূত্রে বর্ণিত। ইমাম জাইনুদ্দীন ইরাকি (রহ.) বলেছেন, রাসুল (স.) জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়েছেন।’ (মিরকাত: ২/১১২)

 

এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও একটি হাদিস বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) জুমার পূর্বে এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়েছেন। (আল মুজামুল কাবির: ১২৬৭৪)

সাহাবি ও তাবেয়িনদের মধ্যেও এই আমল ছিল। আবু আব্দুর রহমান আসসুলামি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৫৫২৫)

এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য। (আদ দিরায়াহ: ১/১১৩)

ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, সুফিয়ান সাওরি ও আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মতের অনুসরণ করেছেন। (তিরমিজি: ৫২৩)

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। আর এই চার রাকাতের মাঝে কোনো সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর জুমাশেষে দুই রাকাত এবং তারপরে চার রাকাত পড়তেন। (শরহু মাআনিল আসার: ১৯৬৫)

হাদিসটি সহিহ। কারণ আলি ইবনে মাবাদ ও ফাহাদ ব্যতীত এ হাদিসের সব রাবি বুখারি-মুসলিমের বর্ণনাকারী। ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) জুমার পূর্বে চার রাকাত আদায় করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫৪০৫)

সুতরাং উপরোক্ত মারফু, মাউকুফ, মাকতু হাদিস ও আসার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, জুমার আগে চার রাকাত নামাজ সুন্নত এবং তা রাসুলুল্লাহ (স.), সাহাবা ও তাবেয়িসহ সব যুগের উলামায়ে কেরামই আমল করতেন।

এই সুন্নতের গুরুত্ব সম্পর্কে ইমামদের অধিকাংশের মত হলো—জুমার নামাজের আগের সুন্নত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ইমামগণ নসের আলোকেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলেছেন। কারণ নফল নামাজের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া যায়, আদেশ দেওয়া যায় না। আদেশ করার অর্থ, এই নামাজ অন্তত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যেমন পরের চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

এ বিষয়ে ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ইজমা আছে যে, জুমার আগে সূর্য ঢলার পর নামাজ পড়া উত্তম আমল। তবে ইমামরা এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে, জুমার আগের সুন্নত জোহরের আগের চার রাকাতের মতো মুয়াক্কাদা, নাকি আছরের আগের সুন্নতের মতো মোস্তাহাব?

এক্ষেত্রে অধিকাংশ ইমাম বলেছেন, জুমার আগের সুন্নত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা রাতিবা। এটি ইমাম আওজায়ি, সুফিয়ান সাওরি, ইমাম আবু হানিফা এবং তাঁর ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)- এর মতও এমন। (ফাতহুল বারি: ৫/৫৪২-৫৪৪)

সুতরাং বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী হাদিস ও আসার দ্বারা প্রমাণিত যে কাবলাল জুমা ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত অর্থাৎ সুন্নতে মোয়াক্কাদা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের প্রত্যেক বিষয়ে সঠিক বুঝ দান করুন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করুন ৷ আমিন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments