মহান আল্লাহর অনেকগুলো গুণবাচক নামের মধ্যে দুটি হলো—আল কাহহার (তথা মহাপ্রতাপশালী বা দমনকারী বা শাস্তিদাতা) এবং জুনতিকাম (প্রতিশোধ গ্রহণকারী)। কিন্তু তিনি দ্রুত শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে বান্দাকে ক্ষমা করতে প্রস্তুত থাকেন।
এর মূল কারণ হলো- তিনি দয়াময় (রহমান), দয়ালু (রাহিম), ক্ষমাশীল (গাফুর) এবং দোয়া কবুলকারী (মুজিব)। এ চারটিও তাঁর গুণবাচক নাম। বান্দা যখন আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করে, তিনি শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে ক্ষমাশীলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০)
আর সাধারণত ভালোবাসার কেউ যখন ক্ষমার আশায় অশ্রুসজল হয়, তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। স্রষ্টার পক্ষে তো সেটি অসম্ভবই বলা চলে। বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা প্রসঙ্গে এক হাদিসে এসেছে, ‘মা তার সন্তানের ওপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর তদপেক্ষা অধিক দয়ালু।’ (সহিহ বুখারি: ৭/৭৫, কিতাবুল আদাব: ৫৯৯৯; সহিহ মুসলিম, ৪/২১০৯, কিতাবুত তাওবা: ২৭৫৪)
অতএব, আল্লাহ তাআলা শাস্তিদাতা হলেও বিশেষ গুণাবলীর কারণে শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমাকেই অগ্রাধিকার দেন। কখনও এক ফোঁটা অশ্রুর কারণেই তিনি বান্দার সারাজীবনের গুনাহ মাফ করে দেন এবং জাহান্নামকে চিরতরে হারাম করে দেন। এর প্রমাণ হাদিসেই আমরা দেখতে পাই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)
তবে হ্যাঁ, মহান প্রভুর ক্ষমাশীলতার সুযোগে সারাজীবন অপরাধ করলে কিংবা আল্লাহর আদেশ-নিষেধে উদাসীন থাকলে নিশ্চয়ই তিনি শাস্তিকেই বেছে নেবেন। অর্থাৎ তখন তিনি হয়ে যাবেন কাহহার বা জুনতিকাম। যা তিনি বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘…যা গত হয়েছে তা আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। যে পুনরায় করবে আল্লাহ তার থেকে প্রতিশোধ নেবেন। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’ (সুরা মায়েদা: ৯৫)
এরপরও প্রতিশোধ গ্রহণের বিষয়টি তিনি অনেক দেরিতেই সংঘটিত করে থাকেন। আগে সংশোধনের সুযোগ দেন। তাঁর আরেকটি নাম হলো আল মুয়াখখির তথা অবকাশ দানকারী। সুতরাং অবকাশ দেওয়াও তাঁর বিশেষ একটি গুণ। তাছাড়া তিনি সত্য উন্মোচিত করার আগে শাস্তি দেন না। এ বিষয়ে দলিল হলো- ‘আমি কোনো জাতিকে শাস্তি দান করি না যতক্ষণ না রাসুল প্রেরণ করি।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৫) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) কুরাইশদের সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ তাদের সংশয় দূর করে দেন, তারপরও তারা ইসলামের সঙ্গে শত্রুতায় লিপ্ত হয়। ফলে আল্লাহ বদরের দিন তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।’ (সহিহ বুখারি: ৪৮২২)
বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—‘যে ব্যক্তি তাঁর প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট হয়ে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে অধিক অবিচারকারী আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা সাজদা: ২২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধের প্রতি আত্মসমর্পণ করার তাওফিক দান করুন। সীমালঙ্ঘন না করার তাওফিক দান করুন। আমিন।