Monday, May 20, 2024
HomeScrollingআইএমএফের অর্থছাড় অর্থনীতিতে কতটুকু স্বস্তি দেবে?

আইএমএফের অর্থছাড় অর্থনীতিতে কতটুকু স্বস্তি দেবে?

নানা আলোচনা ও গুঞ্জনের পর অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় পাচ্ছে বাংলাদেশ। শুক্রবারের মধ্যে এই অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার চলতি মাসে তৃতীয়বারের মতো কমেছে ডলারের দাম। ডিসেম্বরেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশার কথা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসব বিবেচনায় আপাতদৃষ্টিতে দেশের অর্থনীতি কিছুটা স্বস্তির দিকে বলে মনে হলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফএর অর্থছাড়ের বিষয়টি সাময়িকভাবে ইতিবাচক হলেও নিম্নমুখী ডলারের বিষয়টি ‘হাস্যকর’।

চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে ১ দশমিক ৩১ ডলার ঋণ সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ছাড়াও বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী থেকে এই ঋণ পাওয়া যাবে। যা ইতোমধ্যে অনুমোদন হয়ে গেছে।

গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জানান, শুক্রবারের মধ্যে আইএমএফ থেকে প্রায় ৬৯০ মিলিয়ন ডলার দেশের রিজার্ভে যোগ হবে। এছাড়াও এডিবি থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলার ও বিভিন্ন উৎস থেকে ১৩০ মিলিয়নসহ মোট ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে, যা এই মাসেই দেশের রিজার্ভে যুক্ত হবে।

মেজবাউল হক আরও জানান, এখন গ্রোস রিজার্ভ আছে ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রোস রিজার্ভ এক হাজার ৯১৩ কোটি লাখ ডলার বা ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন। এ মা‌সে রে‌মিট্যান্সসহ ডলার আসার প্রবাহ ইতিবাচক রয়েছে। স‌ঙ্গে দাতা সংস্থার ঋণ যোগ হ‌চ্ছে। কিছু খরচ হ‌বে। ত‌বে আ‌য়ের চে‌য়ে ব্যয় কম হ‌বে। তাই রিজার্ভ কমার কারণ নেই।‌ ডিসেম্বরে হিসাব করে বলা যা‌বে। ত‌বে জানুয়ারিতে আকুর পেমেন্ট আছে এক বিলিয়নের মতো। সবমি‌লি‌য়ে রিজার্ভ ভা‌লো হ‌বে বলা যায়।

অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ঋণ অনুমোদনের পরই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে বেশ কিছু শর্ত দেয় সংস্থাটি।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত জুনভিত্তিক বিভিন্ন সূচকে শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে ৪ অক্টোবর আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় আসে। ওইসময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিশনকে জানানো হয়, অন্যান্য শর্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। দেশের জাতীয় নির্বাচনের পর এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। মিশনটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দফতরের সঙ্গে টানা ১৬ দিন বৈঠক করে।

এদিকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫ পয়সা কমিয়ে ডলার কেনাবেচার নতুন দর ঠিক করেছে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। এর ফলে সব উৎস থেকে ডলার কিনতে  সেবা খাতসহ সব ধরনের রফতানি আয়, বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স, আন্তঃব্যাংকে কেনা ডলারের বিনিময় হার হবে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর বিক্রির (আমদানি, আন্তঃব্যাংক, বিদেশে অর্থ প্রেরণ) ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা।

গত ২ ডিসেম্বর থেকে ক্রয়পর্যায়ে ডলারের দর ছিল ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা; বিক্রিতে ১১০ টাকা ২৫ পয়সা। এ নিয়ে এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে তিন দফায় ডলারের দর কমল মোট এক টাকা। গত ২২ নভেম্বর প্রথমবার ৫০ পয়সা, তারপর ২৯ নভেম্বর ২৫ পয়সা দর কমানো হয়েছিল।

এছাড়াও চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

গত ১০ ডিসেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট দিবসের এক সেমিনারে খায়েরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সংকোচনমূলক আর্থিক নীতির মাধ্যমে তার অনেকটা আমরা উত্তরণ করতে পেরেছি। গত মাসে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমেছে। এতে আমি আশাবাদী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাশের নিচে নেমে আসবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭ দশমিক ৫ শতাংশে চলে আসবে। আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের নিচে থাকবে।’

সবমিলে কয়েকটি সূচকে ইতিবাচক অবস্থানের দিকে দেশের অর্থনীতি। যদিও নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আকু পেমেন্ট রয়েছে। সেখানে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি রিজার্ভ থেকে বের হবে (পেমেন্ট হবে)।

এর মধ্যে আইএমএফ’র ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি কতটা স্বস্তি নিয়ে আসবে তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অর্থনীতিবিদরা

বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির যে অর্থটা যোগ হচ্ছে বা হয়েছে এটা হয়তো সাময়িকভাবে কিছুটা স্বস্তি দেবে। কিন্তু এটাতে খুব বেশি লাভ নাই। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসে এখন যে ব্যয় তার বিপরীতে দাতা সংস্থাগুলো যদি ঋণ দেয় রিজার্ভে সেটা খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না। রিজার্ভের যে পতনের ধারা তা রোধ করতে হলে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হবে।

‘নিম্নমুখী’ ডলারের বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, যেখানে দেশে ডলার সংকট সেখানে ডলারের দাম কমানো হাস্যকর। কারণ ডলার তো এখন পাওয়া যাচ্ছে না। আর যারা রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করতে পারবে, তারা হয়তো কিছু সুবিধা পাবে। কিন্ত বাস্তবে ডলারের দাম কমছে না। খোলাবাজারে এর থেকে অনেক বেশি রেটে বিক্রি হচ্ছে।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আইএমএফর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আমাদের রিজার্ভকে কিছু সময়ের জন্য স্থিতিশীল রাখবে। এই সময়টাতে হয়তো কমবে না। এটা একটা ভালো দিক। বর্তমান সময়ের জন্য বেশ সহায়ক। তবে ডলারের যে দাম কমেছে এটা বাস্তবসম্মত নয়। দেশে ডলার সংকটের মধ্যে এটা কীভাবে করছে বুঝি না। এভাবে জোর করে টাকার মান বাড়ানো যায় না।’

সুত্র-ঢাকা মেইল

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments