দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে একের পর এক জেলা যখন শত্রুমুক্ত হচ্ছিল, যখন বাঙালির দরজায় জয় কড়া নাড়ছিল ঠিক তার আগ মুহুর্তে মুক্তিকামী বাঙালিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা আঁকে পাকিস্তানি বাহিনী। বাঙালি যেন কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করে দেশের মেধাবী সন্তানদের।
তাদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের বই-পুস্তকে উঠে আসে শহীদদের নাম, ছবি ও মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের কথা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসেও সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম বলতে পারছেন না বর্তমান প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম বলতে বলা হলেও সবার পক্ষ থেকে উত্তর এসেছে ‘জানি না’।
বধ্যভূমিতে আসা শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন শিক্ষার্থীর কাছে পাঁচজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম জানতে চাওয়া হলে একজনও নাম বলতে পারেননি। পরে এক শিক্ষার্থী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বদলে ভাষা শহীদের নাম বলেন।
পাঁচজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম বলতে পারবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে গাজী মাহমুদ নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেখে বলতে পারব।’
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মিতু বলেন, ‘আমি জানি না। মনে নাই’।
একই উত্তর দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক নারী শিক্ষার্থী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইটিই বিভাগের এক পুরুষ শিক্ষার্থী জবাব আসে, ‘এই মুহুর্তে মনে নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিগেড ৭১ এর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল বলেন, ‘এ দায় আমার৷ ২১ বছর মেজর জিয়া, নিজামীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে লুকিয়ে রেখেছিল। আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে ঘর থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষা দিতে হবে।’
বর্তমান প্রজন্ম শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম জানে না। এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ টি এম মইনুল হোসাইন বলেন, ‘আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের জানানোর চেষ্টা করছি। যারা শহীদ বুদ্ধিজীবী তাদের ছবিসহ তালিকা করে এই মাসের মধ্যেই আমরা ঢাকা কলেজে লাগানোর চেষ্টা করব।’
সুত্র- ঢাকা মেইল