Friday, July 4, 2025
HomeScrollingপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভয়, নির্দিষ্ট আসনে জয়ের নিশ্চয়তা চায় জাপা

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভয়, নির্দিষ্ট আসনে জয়ের নিশ্চয়তা চায় জাপা

নির্দিষ্ট কিছু আসনে জয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে ভোটে যেতে চায় জাতীয় পার্টি৷ নৌকার প্রার্থী থাকলে জয় নিয়ে সন্দিহান নেতারা৷ ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির এখন দরকষাকষি চলছে৷

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী থাকবে না, এমন নিশ্চয়তাও চেয়েছে দলটি৷ জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে ভোট করে জিতে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না৷ প্রশাসনও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে না৷ ফলে নৌকার সঙ্গে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না৷

বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমার আসনে জাতীয় পার্টি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে৷ আবার আওয়ামী লীগও প্রার্থী দিয়েছে৷ ফলে এখানে নিরপেক্ষ ভোট হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে৷ এই অবস্থা শুধু আমার আসনে না, সবগুলো আসনেই৷ এখন পর্যন্ত প্রশাসনকে আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখছি না৷ তবে সমঝোতার ভিত্তিতে যদি নৌকার প্রার্থী না থাকেন তাহলে পাস করা কঠিন হবে না৷ আমি মনে করি, সমঝোতা হলে নির্দিষ্ট আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থী থাকবে না৷’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে বলেছেন, সবাইকে ভোট করে জিতে আসতে হবে৷ কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হবে না৷ ফলে অধিকাংশ আসনে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে৷

জাতীয় পার্টির তৃণমূলের একাধিক নেতা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকলেও যদি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে, তাহলেও অধিকাংশ আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাবে৷ শুধু জাতীয় পার্টি না, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটে থাকা শরিকদের পক্ষেও জেতা কঠিন হবে৷ আবার অনেক আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যাবেন৷ সবাই জানে নির্বাচনের পর কে ক্ষমতায় আসছে৷ ফলে আওয়ামী লীগের লোকেরা সব জায়গাতেই পেশি শক্তি দেখাবে৷ ফলে শুধু জাতীয় পার্টি না, সমঝোতা না হলে ১৪ দলীয় জোটের অন্য প্রার্থীদেরও পাস করা কঠিন হবে৷

মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান৷ সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সিরাজুস সায়েফিন সাঈফ৷ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী থাকলে প্রশাসনের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন৷ ফলে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন করছি৷ ফলাফল কী হবে আমরা জানি৷’

অন্যদিকে নড়াইল-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি৷ এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাড. খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘মানুষ আসলে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন৷ কিন্তু ভোটটা তো সুষ্ঠু হতে হবে৷ সেই নিশ্চয়তা তো আমরা পাচ্ছি না৷ ফলে রেজাল্ট যা হওয়ার তাই হবে৷ দল বলেছে তাই ভোট করছি৷’

জয়ের নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করতে চান৷ তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বুধবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘জোট-মহাজোট নয়, লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি৷ আর সমঝোতার মতো কিছু হলে তা মনে মনে হতে পারে৷’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করব৷ নৌকা নিয়ে ভোট করার বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি৷ এগুলো ফালতু আলোচনা৷ তবে হ্যাঁ, সমঝোতা হলে কিছু আসনে আমরাও তাদের ছাড় দেবো, তারাও আমাদের কিছু আসনে ছাড় দেবে৷ এগুলো আলোচনার ভিত্তিতেই সমাধান হবে৷ কিন্তু নৌকা নিয়ে আমরা ভোট করব না৷’

TT

গত দুটি (২০১৪ ও ২০১৮ সাল) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটি ২২টি আসনে, তার আগে ২০১৪ সালে ২৯টি আসনে জয়ী হয়৷ এবারও সমঝোতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু আসন চায় দলটি৷ এবার তাদের দাবি ৪০টি আসন৷ যদিও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বর্তমান সংসদে থাকা ২২টি আসনের নিশ্চয়তা এখনো পায়নি দলটি৷

এদিকে মঙ্গলবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বৈঠক হয়েছে বলে আলোচনা হচ্ছে৷ সেখানে আসন ভাগাভাগি ও নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ যদিও বুধবার সকালের ব্রিফিংয়ে মুজিবুল হক চুন্নু এই বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বুধবার রাতে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক হয়নি৷ তবে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাদের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

সরকারি দল এবং বিরোধী দল আসন ভাগাভাগি করলে সেটা কেমন নির্বাচন হবে? এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটুকু হবে? জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এটা তো একটা প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কী? এখানে সরকারি দল আবারও ক্ষমতায় আসবে এটা নিশ্চিত, তাহলে ভোটের অর্থ কী থাকল৷ নির্বাচনটা হলো মানুষের প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকা৷ কিন্তু এখন যে নির্বাচনটা হচ্ছে সেখানে আপনাকে বলা হচ্ছে, আপনি মিনারেল ওয়াটার খাবেন, না ফুটানো পানি খাবেন? এর যেকোনো একটা আপনি বেছে নিতে পারেন কোনো সমস্যা নেই৷ দুটোই প্রায় এক৷ কিন্তু নির্বাচনটা হওয়ার কথা আপনি মিনারেল ওয়াটার খাবেন, নাকি ওয়াসার সরবরাহ করা ট্যাপের পানি খাবেন? তাহলে মানুষের পছন্দের বিষয় থাকতো৷ ফলে এখন যেটা হচ্ছে তার পুরোটাই প্রহসনের৷’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এবার যেটা হচ্ছে, সেটা কিন্তু পরিষ্কার৷ কোনো রাখঢাক নেই৷ প্রধানমন্ত্রী তো পরিষ্কার বলেছেন, আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী থাকবে৷ জাতীয় পার্টিও তো তাদের জোটসঙ্গী৷ ফলে তারা প্রকাশ্যেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছে৷ ফলে নির্বাচনটা কী হতে যাচ্ছে সেটা আমরা সবাই দেখছি৷ এখানে তো গোপন কিছু নেই৷ আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটিও যদি না আসে সেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না৷ ফলে এখানে যেটা হচ্ছে সেটা কী আমরা সবাই দেখছি৷’ সূত্র: ডয়চে ভেলে

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments