Tuesday, July 1, 2025
HomeScrollingগাজায় স্থল অভিযানে হামাসের ৮০০ টানেল চিহ্নিত

গাজায় স্থল অভিযানে হামাসের ৮০০ টানেল চিহ্নিত

তিন দিনের ভারী বোমাবর্ষণ শেষে এবার অবরুদ্ধ গাজার দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিওতে প্রচারিত প্রাথমিক খবরে এ বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বর্তমানে তারা খান ইউনিসের উত্তরে অভিযান চালাচ্ছে।

খান ইউনিস শহরের কাছাকাছি জায়গায় ইসরায়েলি একটি ট্যাঙ্কের ছবিও যাচাই করে দেখা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর  (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি সেনাদের জানিয়েছেন, তারা দক্ষিণ গাজায় জোরালোভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজা ডিভিশনের অতিরিক্ত সেনাদের সঙ্গে নিজেদের সামরিক লক্ষ্যের বিষয়ে কথা বলেন আইডিএফ প্রধান। এ সময় হামাস কমান্ডারদের হত্যার বিষয়েও কথা বলছিলেন তিনি।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আমরা দৃঢ়তার সাথে জোরালোভাবে যুদ্ধ করেছি। এখন আমরা গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলেও একইভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।

আইডিএফের একজন মুখপাত্র পরে নিশ্চিত করেছেন ‘সন্ত্রাসীদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ চালিয় যাওয়া’সহ পুরো গাজা উপত্যকা জুড়ে ‘স্থল অভিযান সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে’ ইসরায়েল।

এদিকে কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে যে এক সপ্তাহের বিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি গত শুক্রবার শেষ হয়। এরপর গাজায় আবারও ব্যাপকভাবে বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যেটিকে এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় হামলা হিসাবে বর্ণনা করেছেন খান ইউনিসের বাসিন্দাররা।

সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছে। আর তার বিনিময়ে হামাস ১১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এরপর গতকাল রবিবার সকালে খান ইউনিসের বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গাজার উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার উদ্বাস্তু দক্ষিণাঞ্চলে এসে আশ্রয় নেয়। এসব উদ্বাস্তুদের মধ্যেই হামাসের সদস্যরা লুকিয়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখন গাজার দক্ষিণাঞ্চলকে তাদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।

যা বলছে জাতিসংঘ

গত কয়েকদিনে দক্ষিণাঞ্চলে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং এর ফলে সেখানকার হাসপাতালগুলোতে যে চিত্র দেখা গেছে, সেটি রীতিমত আতঙ্কের বলে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা।

ইউনিসেফের কর্মকর্তা জেমস এল্ডার জানান, গাজার কোনো হাসপাতালে আগে কখনো এমন অবস্থা দেখেননি। খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল হাসপাতালকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, তাদের অভিযানে বেসামরিক নাগরিকরা যেন হতাহত না হন, সেজন্য ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ইউনিসেফের কর্মকর্তা জেমস এল্ডার বলেন, নাসের হাসপাতালের কাছে তিনি ধারাবাহিকভাবে বড় বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। গত কয়েক দিনের হামলায় শিশুদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেক শিশুর মাথায় আঘাত যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি কারও কারও শরীর আগুনে খুব খারাপভাবে পুড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালটিতে আমি নিয়মিত যাই। সেখানে ভর্তি শিশুরা এখন আমাকে চেনে। শিশুদের পরিবারের সদস্যরাও আমাকে চেনে। তারা আমার হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলছে, দয়া করে আমাদের নিরাপদ কোথাও সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু কোন জায়গাটা আসলে নিরাপদ বলেন? এটা খুবই দুঃখজনক, তারা আমাকে এমন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে, যার একমাত্র উত্তর হচ্ছে : গাজার কোথাও নিরাপদ নয়।’

ইসরায়েলের গত কয়েকদিনের টানা বোমা হামলায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। আর এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

গাজায় অবস্থান করা ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি নাগরিক মোহাম্মদ গালায়নি বলেছেন, সেখানকার শহরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রকম বিপর্যয়কর।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, মানুষ ৫০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নৃশংস আক্রমণ সহ্য করে চলেছে এবং জীবন ধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, যেমন – খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন এবং বর্জ্য পরিষেবার অবস্থা খুবই নাজুক।

গালায়নি একজন বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ, যিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে থাকেন। গত ৭ অক্টোবরের হামলার কিছুদিন আগে মাকে দেখতে তিন মাসের সফরে গাজায় এসেছিলেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এখন সেখানেই আটকা পড়ে আছেন।

১৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হন। এছাড়া ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়।

অন্যদিকে শুক্রবার থেকে আবারও হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরায়েলে নিয়মিত রকেট বোমা ছোড়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। শনিবার তেল আবিবের নিকটবর্তী হলন শহরে ২২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, যাকে পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলের নির্দেশের পর খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ মানুষের অনেকেই ইতোমধ্যে অন্যত্র সরে গেছেন। জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসেবে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ‘এমন একটি ছোট জায়গায় আরও বেশি করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যেটি ইতিমধ্যেই খুব ছোট।’

অন্যদিকে আইডিএফের অনলাইনে হামলার জন্য নির্ধারিত এলাকার মানচিত্র পোস্ট করা শুরু হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গাজার সাধারণ নাগরিকদের সরে যেতে বলে বিমান থেকে লিফলেট ফেলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভের বলেন, বেসামরিক নাগরিকরা মোটেও তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু নয়। কিন্তু হামাস যেহেতু ওইসব বেসামরিক এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে, ফলে গাজার সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

গাজায় হামাসের ব্যবহৃত ৮০০টির মতো ‘সন্ত্রাসী টানেল’ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ প্রায় দশ হাজারের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments