আরব নেতারা শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের উপর প্রকাশ্যেই চাপ প্রয়োগ করেছেন যাতে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি করা যায়। আরব নেতাদের কাছে ব্লিংকেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির ফলে হামাস আবার সংগঠিত হবে এবং ইসরায়েলের উপর আরও আক্রমণ চালাবে।
ব্লিংকেন আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ঘণ্টাখানেক আগে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে হামলা চালায় ইসরায়েল। সেখানে কমপক্ষে ১৫ জন প্রান হারিয়েছেন। স্কুলটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। খবর ভয়েস অব আমেরিকার
গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর চার সপ্তাহ পর ব্লিংকেন জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।
হামাস যোদ্ধারা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপর ইসরায়েল দাবি করে যে তাদের ১৪০০ লোককে হত্যা করেছে হামাস। যদিও এই দাবি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েল থেকে ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় পিঁপড়ার মতো মানুষ হত্যা করছে ইসরায়েল। চরম মানবিক সংকটে থাকা লাখ লাখ মানুষের ওপর নির্বিচারে বিমান হামলা করছে তারা।
আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল; কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। এরই মধ্যে অনেক স্থানে ফুরিয়ে গেছে পানি, খাবার ও জ্বালানি। যার ফলে গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
‘প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্তে চারপাশে কেবল বোমার শব্দ।’ ইসরায়েলের বাছবিচারহীন হামলার ভয়াবহতা বোঝাতে এভাবেই কথা বলছিলেন ফিলিস্তিনের গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা গাদা ওউদা। ফ্রিল্যান্সার এই দোভাষী থাকতেন গাজা সিটিতে। সেখানকার বাসাটি ছেড়ে উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরে এসেছেন তিনি। কিন্তু এখানেও ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে মুক্তি পাননি গাদা ওউদাসহ অন্য ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো কোনোরকমে চালু রয়েছে তাতে জ্বালানির তীব্র ঘাটতি রয়েছে। পুরো গাজায় যে কয়টি ব্যাকারি রয়েছে, তার বেশিরভাগই ইসরায়েলের সরাসরি হামলার শিকার হয়েছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বোমা হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। উপত্যকাজুড়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য জরুরি রক্ত সহায়তা দরকার বলে জানানো হয়েছে।
বিবিসির কাছে পাঠানো ভয়েস রেকর্ডিংয়ে ফ্রিল্যান্সার দোভাষী গাদা ওউদা বলেন, এই যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে পাউরুটির জন্য দীর্ঘ সারি দেখা যেত। এখন সেই পাউরুটিও দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর যতটুকু পাউরুটি মেলে, তা বাসায় নিয়ে ফিরলে শুধু কষ্টই পেতে হয়। কারণ, পরিবারের সব সদস্যের জন্য তা যথেষ্ট হয় না। এক খবরে বলা হয়েছে, সারাদিনের জন্য দুই টুকরা রুটিও মিলছে না গাজায়।
গাজায় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ ভবন ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘের স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে আশ্রয়ও নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে সেসব হাসপাতালও এখন খালি করতে বলা হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল খালি করা সম্ভব নয়।