Thursday, May 9, 2024
HomeScrollingআমার বাবারে ছাড়া আমি কেমনে বাচঁমু

আমার বাবারে ছাড়া আমি কেমনে বাচঁমু

অনলাইন ডেস্ক:

ট্রলার যখন ডুবে যায় তখন আমার ছেলে কোলে ঘুমাইয়া ছিল। হঠাৎ তাকাইয়া দেখি সামনে একটি বাল্কহেড। বিকট একটা শব্দ হইলো। তারপর আমাদের ট্রলারটি তলাইয়া গেল। আমার ছেলেটা পানির স্রোতে কোল থেকে ভাইসা গেল। পানির নিচে আমার ছেলেটারে অনেক খুঁজলাম। খুজঁতে খুজঁতে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি ট্রলারের ওপরের তেরপাল ছিড়ে বের হয়ে আসলাম। দম নিয়ে আবার ট্রলারের ভেতরে গেলাম। এভাবে ৩ বার দম নিয়ে ট্রলারে ঢুকে আমার ছেলেটারে খুঁজলাম, কিন্তু খুঁজে আর পাইলাম না। আবার ডুব দিয়ে যাওয়ার শক্তি না পাইয়া পাড়ে দাঁড়াইয়া থাকা অনেক মানুষের হাতে-পায়ে ধরলাম আমার বাবারে খুঁজে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেউ গেল না। বিলাপ করতে করতে এভাবেই বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাটি এলাকার ট্রলারডুবি ঘটনায় মৃত ফারিয়ান সরকারের (৯) মা শান্তা সরকার। নিহত ফারিয়ানের লাশ জোহরের নামাজের পর সিরাজদিখান উপজেলার খিদিরপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। একমাত্র ছেলেকে হারানোর খবর শুনে ফারিয়ানের কুয়েত প্রবাসী বাবা ফিরোজ সরকার রোববার দুপুর ১টার দিকে বাড়িতে এসে পৌঁছেছেন। দেশে ফিরে ছেলেকে দাফন করে ঘরের মধ্যে নিথর দেহ নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন তিনি। কথা বলার শক্তিটুকুও যেন নেই তার। ছেলের আবদার মিটাতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শনিবার সকালে ফারিয়ানকে নিয়ে মা শান্তা সরকার পদ্মা নদীতে ঘুরতে যায়।শান্ত সরকার বলেন, আমরা পদ্মা নদীতে ঘুরতে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখি। তারপর পদ্মা নদীতে সবাই মিলে গোসল করি। ফেরার পথে বাল্কহেডের ধাক্কায় আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার বাবারে ছাড়া আমি কেমনে বাচঁমু। ওরে ছাড়া এ জীবনে আমি একটা রাইতও ঘুমাই নাই। আমার ছেলেটা বলতো মা আমার ঘুম পাড়াইয়া দাও, তুমি ঘুম পারাইয়া না দিলে আমার ঘুম আসে না। ও আমারে ছাড়া চির জীবনের জন্য ঘুমাইয়া গেল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহতদের বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে ঘরে ঘরে শোকের মাতম চলছে। খিদিরপুর কবরস্থানে সারিবদ্ধভাবে একের পর এক লাশ দাফন করা হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে ৮ জন নিহত ও ৫ জন নিখোঁজের তথ্য দিলেও সরেজমিনে গিয়ে এবং নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ৭ জন নিহত ও ৩ শিশু নিখোঁজ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহতের স্বজন মো. আরশাদ হোসেন বলেন, যারা মারা গেছে সবাই আমার আত্মীয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৮ জন মারা যাওয়ার নাম প্রচার হলেও আমার গ্রামের ৭ জন মারা গেছে এবং ৩ শিশু এখনো নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ শিশুরা হলো, তুরান (৮), নাভা (৫), মাহিন (১১)।

এ ব্যাপারে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফুল আলম তানভীর বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদেহগুলো স্বজনদের কাছে ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক মৃতদেহের স্বজনদের কাছে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আজ বাদ জোহর আমরা সিরাজদিখান উপজেলার প্রসাশনের পক্ষ থেকে সিরাজদিখান সরকারি মডেল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি।

প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার সকালে সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের নারী-শিশুসহ ৪৬ জন ট্রলার নিয়ে  পদ্মা নদীতে পিকনিকে যান। পিকনিক শেষে ট্রলারটি তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতাব্দির দিকে যাচ্ছিল। রাত আটটার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি পানিতে তলিয়ে যায়। রাতেই উদ্ধার অভিযান শুরু করে ডুবরিরা। শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩ শিশু নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, মোকছেদা বেগম (৪০), হ্যাপি আক্তার (২৮), এপি আক্তার (৩০), পপির দুই ছেলে সাকিবুল (১০), সজিবুল (৪)। হুমায়ারা (৫ মাস) ও ফারিয়ান (৮)।

এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments