দীপক চন্দ্র রায় ও ছন্দা রানীর সংসারে দুই মেয়ে ভূমিকা (১৫) ও বৃষ্টি (৮)। দীপক বোদা উপজেলার ধনিপাড়া-গাইঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক। থাকেন বোদা উপজেলা সদরের কলেজ পাড়ায়। রবিবার বোদা উপজেলার আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবিতে তার দুই মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বৃষ্টির লাশ পাওয়া যায় আর ভূমিকার লাশ মঙ্গলবার উদ্ধার হয়। দুই মেয়ের মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান স্বামী-স্ত্রী।
বাবা দীপক চন্দ্র রায় কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন, রবিবার সকালে ভূমিকা যাওয়ার আগে বলেছিল ‘বাবা আমরা মায়ের সঙ্গে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি ফিরে আসব’। আমি বললাম, ‘সাবধানে যাবি, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি’– এটাই ছিল মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা। ফিরে আসল ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে।
তিনি বলেন, ভূমিকা ছিল মেধাবী, পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ত। ছোট বৃষ্টি স্থানীয় সানন্দা কিন্ডারগার্টেনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
ভূমিকার স্কুলশিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, ভূমিকা অত্যন্ত মেধাবী ছিল। এভাবে হারিয়ে যাবে ভাবতেই পারছি না।
দুই কন্যা সন্তান নিয়ে মা বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিল মহালয়ার অনুষ্ঠানে, ঘাট পার হওয়ার জন্য আর সবার মতো তারাও নৌকায় ওঠেন। মা ভাগ্যক্রমে তীরে আসতে পারলেও চিরদিনের জন্য দুই মেয়েকে হারিয়ে ফেলেন। সোমবার বৃষ্টির লাশ পাওয়া যায় করতোয়ার ভাটিতে আর মঙ্গলবার পাওয়া যায় ভূমিকার লাশ।
ভূমিকাদের পড়শি অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ভোর হলে তাদের দেখা হতো, আংকেল আদাব বলত। ছোটবেলায় এদের অনেক কোলে নিয়েছি। ওদের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। আউলিয়ার ঘাটে হয়তো একদিন সেতু ঠিকই হবে কিন্তু এই সম্ভাবনাময় জীবনগুলো আর ফিরে পাওয়া যাবে না।’