সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা গ্রামের আবুল হাসেম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লরি চালাতেন। বন্দর থেকে কনটেইনার বহন করার কাজ করতেন তিনি। শনিবার রাতে কনটেইনার আনলোড করতে লরি নিয়ে গিয়েছিলেন বিএম ডিপোতে। কথা ছিল ১০টার মধ্যে কন্টেইনার আনলোড করে বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু ১০টার সময় তিনি বাড়ি না ফিরে ফোন দিয়ে স্ত্রীকে মেয়েদের ভাত দিতে বলেন। কনটেইনার আনলোড করতে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। তারপর বাড়ি ফিরবেন বলে জানান।
‘দুই ঘণ্টা পর আসছি, মেয়েদের ভাত দিয়ে দাও। বাবা-মাকে বলেছিল। কিন্তু বাবা এখনো এল না। এই দুই ঘণ্টা কখন শেষ হবে? আপনারা আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন। আমাদের আর কেউ নাই’।
১৩ বছর বয়সী সন্তানের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আছে। আশপাশের অনেকে এসেছেন সান্ত্বনা দিতে। মেয়েদের কান্না দেখে সবার চোখে পানি। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নাই কারো মুখে।
মঙ্গলবার বিকেলে কুমিরার মসজিদ্দায় আবুল হাসেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল এই চিত্র। প্রতিবেশীরা জানান, বিস্ফোরণের রাত থেকে অনবরত কেঁদে চলেছে আবুল হাসেমের দুই মেয়ে ও তাদের মা। বড় মেয়ে সালমা আক্তার (১৩) ৮ম শ্রেণির ছাত্রী, ছোট মেয়ে সায়মা আক্তার (৮) ও একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ ইসা বয়স ৬ বছর। বড় মেয়ে সবকিছু বুঝলেও ছোট দুই সন্তানরা এখনো পরিস্থিতি ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারছে না। মা ও বড় বোনকে কাঁদতে দেখে তারাও কাঁদছে।
আবুল হাসেমের মামাতো ভাই জানান, শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে কনটেইনার নিয়ে আসেন আবুল হাসেম। কথা ছিল পরদিন (রবিবার) সকালে কনটেইনারটি আনলোড করা হবে। সেই অনুযায়ী সকাল ১০টায় ঘর থেকে বের হন আবুল হাসেম। কিন্তু ডিপো কর্তৃপক্ষ সারা দিন অপেক্ষা করিয়েও কনটেইনারটি আনলোড না করায় বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ রাত ১০টার সময় আনলোড করা হবে বলে জানানো হলে এরপর তিনি বাড়ি ফেরার কথা।
তিনি বলেন, বাবা ছাড়া তিনটি অবুঝ সন্তান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তাদের ভবিষ্যৎ তো অনিশ্চিত হয়ে গেল।