মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ আট বছর আগে ইজারা নিয়ে ১১ শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমানের বলাকা ভবনে অভিযান চালিয়েছে দুদক।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি টিম বলাকা অফিসে অভিযান চালায়।
এ বিষয়ে দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, চার ঘণ্টার বেশি অভিযানকালে তারা লিজ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। এর পাশাপাশি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বর্তমান অবস্থান ও কার কতটুকু দায়িত্ব ছিল সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেয় অনুসন্ধান টিম। এ ছাড়া অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র দ্রুত দুদকের পাঠানোর অনুরোধ করেন দুদক টিম।
এ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জানান, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে ইনকোয়ারি হয়েছে। বিষয়টি সংসদীয় কমিটিতে ছিল তারা সেটি রেফার করেছে। সেটি রেফারের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের টিম এসেছে। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। দুদক যেন নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে আমাদের লোকজন সেখানে কাজ করছে। দুদককে সর্বোচ্চ সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমানের ফ্লাইট সংক্রান্ত ডকুমেন্টগুলো আমরা দেখি।
তিনি বলেন, বুধবার দুদকের দু’জনের টিম এসেছে। আমার টিমের বাকি লোকজন সেখানে আছেন। আমাদের সব তথ্য প্রিজার্ভ (সংরক্ষিত) আছে। আমি ২০১৮ সালে জয়েন করেছি। এর আগে কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। আমি দেখেছি ইজিপ্টের দুটি বিমান ভিয়েতনামের বিমানবন্দরে আছে, যেখান থেকে ঠিক করে ফেরত দেওয়ার কথা। এই জটিলতার মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমিসহ আমাদের একটি টিম নিয়ে মিসর গিয়েছিলাম। বিশেষ করে ফেরত দেওয়ার যে নেগোসিয়েশন (আলোচনা) সেগুলোতে আমি ছিলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর নামে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১১ শ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর সংস্থাটির উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। ওই টিম গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে চিঠি পাঠায়।