কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শঙ্কুচাইল সীমান্তে মাদক কারবারিদের গুলিতে গত বুধবার প্রাণ হারান সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার।
নিহত মহিউদ্দিন সরকার ওরফে নাঈম স্থানীয় কুমিল্লার ডাক পত্রিকা এবং এর আগে আনন্দ টিভিতে কাজ করতেন। তিনি উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন সরকারের ছেলে।
জানা গেছে, ওই দিন রাতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য শঙ্কুচাইল সীমান্তে গেলে একদল মাদক কারবারি তাকে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। এ সময় আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের উদ্যোগে কুমিল্লা প্রেসক্লাব এবং নগরীর পুবালি চত্বরে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের মা নাজমা আক্তার বাদী হয়ে আদর্শ সদর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের একাধিক মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি মো. রাজুকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে দুজন এজাহার নামিয় এবং দুজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার এজাহার নামিয় আসামিরা হলেন- মো. ফরহাদ মৃধা (৩৮) ও মো. পলাশ মিয়া (৩৪)।
নিহতের পরিবার এবং সহকর্মীরা জানান, মহিউদ্দিন সরকার নাঈম মাদক ও চোরাকারবারিদের তথ্য এবং ছবি সংগ্রহ করতে প্রায় সময়ই ভারত সীমান্ত এলাকায় যেতেন। ভারত থেকে আসা মাদকের চালানের ছবি তুলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসহ নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রচার করতেন। পাশাপাশি মাদকের চালানের তথ্য পৌঁছে দিতেন পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এতে মাদক কারবারিরা তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাজুর বিরুদ্ধে বেশ কিছু সংবাদ প্রচারসহ ফেসবুকে স্ট্যাটাসই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরই মাঝে বুধবার বিকেলে মাদক ব্যবসায়ী রাজুর একটি বড় মাদকের চালান আসছে বলে তার কাছে একটি ফোন আসে। এ সময় খবর পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি সীমান্তের শঙ্কুচাইল এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে থানা-পুলিশের সঙ্গেও কয়েকবার যোগাযোগ করেন। তার উপস্থিতি টের পেয়ে রাজুর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল তাকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে খুব কাছ থেকে দুটি পিস্তল দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। এ সময় মাথা বুক ও হাতে পাঁচটি গুলি করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
ঘাতকেরা চলে যাওয়ার পর আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর হোসেন বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে মহিউদ্দিনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার শরীরে ৪-৫টি গুলির আঘাত রয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্তের পর বিকেলে পারিবারিক করস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পরিবারের লোকজন জানায়, নিহত মহিউদ্দিন সম্প্রতি মাদক কারবারি রাজু গংদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ নিয়ে বিরোধের জেরেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। ইচ্ছে ছিল ঈদের পরেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকরিতে যোগ দেয়ার।
সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লায় কর্মরত সাংবাদিকসহ নেতারা।
কুমিল্লা রিপোর্টার ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কুমিল্লার সাংবাদিকরা চরম ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্কিত। অবিলম্বে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার দুপুর থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রতিবাদ সভা এবং মানববন্ধন করা হয়। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে ফটো সাংবাদিক ফোরাম এবং বুড়িচং প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা এবং মানববন্ধন করা হয়। পরে কুমিল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে নগরীর পুবালি চত্বরে প্রতিবাদ সভা এবং মানববন্ধন করা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক নীতিশ সাহা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ফারুক, সাদিক মামুন, কুমিল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ওমর ফারুকী তাপস, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জাকির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের প্রমুখ।
এ বিষয়ে বুড়িচং থানার ওসি আলমগীর হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, মহিউদ্দিন হত্যার ঘটনাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, এরই মাঝে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের অত্যন্ত কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, শিগগিরই বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।