অন্তত সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত গরিব দেশগুলোর স্বার্থে করোনার বুস্টার টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সংস্থাটির প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাসকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, এ বিরতির কারণে প্রতিটি দেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল ও জার্মানিসহ একাধিক দেশ করোনা টিকার তৃতীয় ডোজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
কিন্তু ড. টেড্রস সতর্ক করে দেন, এমন পদক্ষেপে দরিদ্রতম দেশগুলো টিকাদানে পিছিয়ে পড়ছে।
ডব্লিউএইচও জানায়, সরবরাহের ঘাটতির কারণে নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে প্রতি ১০০ মানুষের জন্য দেড় ডোজ টিকার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে। সংস্থার প্রধান বলছে, এর উল্টোটাই হওয়া দরকার, বেশির ভাগ টিকা নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে জনগণকে রক্ষায় সরকারগুলোর উদ্বেগ আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু বৈশ্বিক সরবরাহের বেশি টিকা ব্যবহারের পর আরও ব্যবহার আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
উচ্চ ও নিম্ন-আয়ের দেশের মধ্যে টিকাদানের ব্যবধান কমিয়ে আনতে এটি স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জোরালো বার্তা। তারা চায়, আগামী মাসের মধ্যে যেন প্রতিটি দেশে ১০ শতাংশ মানুষ যেন টিকা পায়। কিন্তু চলমান হারে চললে এ লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হাইতি ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কোনো মানুষই এখনো টিকার দ্বিতীয় ডোজ পায়নি।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বাড়বাড়ন্ত ও অন্যান্য কারণে সম্প্রতি বেশ কিছু বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, শীর্ষ বিজ্ঞানীদের অনেকেই বুস্টার ডোজ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, বুস্টার ডোজ নিলেই যে করোনা থেকে মুক্তি মিলবে এমন কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। বরং বুস্টার ডোজকে তারা ধনীদের মুনাফা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে দেখছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক অভ্যন্তরীণ গবেষণা বলছে, বিশ্বের ১১টি ধনী দেশ চলতি বছরের মধ্যেই বুস্টার ডোজ দেবে তাদের পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকদের। এতে মোট ৪৪ কোটি ডোজ বাড়তি টিকার প্রয়োজন হবে। উচ্চ উপার্জন ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত দেশগুলোও যদি একই পথ অনুসরণ করে, তাহলে আরও ৮৮ কোটি ডোজ টিকা লাগবে।
কিন্তু এ টিকাই যদি এখন উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোকে পাঠানো হয়, তাহলে মহামারি মোকাবিলায় অনেকটা এগোনো সম্ভব হবে।
ডব্লিউএইচওর মতে, বিশ্বে এখন ৩৫০ কোটি মানুষ এক ডোজ টিকাও পায়নি। সাধারণত এমআরএনএভিত্তিক টিকাগুলোর বাড়তি এক ডোজে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তা প্রথম দুই ডোজের তুলনায় খুব একটা বেশি না, যা হিসাব করলে ২ শতাংশ বেশি হতে পারে।
মাত্র দুই শতাংশ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের ৮৫ শতাংশ মানুষকে বঞ্চিত করে ধনীদের এই বুস্টার ডোজ নেওয়ার ঘটনাকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।