আফ্রিকার দেশ সোয়াজিল্যান্ডে প্রায় আঠারশো বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদন জানা যায়, দেশটির সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বাংলাদেশিরা।
স্থানীয়দের রোষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি লুটতরাজের শিকার হয়েছেন তারা। আতঙ্কে দেশটি ছাড়ার কথা ভাবছেন অনেকে।
আফ্রিকার শেষ পূর্ণ রাজতন্ত্রের দেশ সোয়াজিল্যান্ড বা এসোয়াতিনিতে গত সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। রাজতন্ত্র বিরোধী বিক্ষোভ দমনে সরকার সেনাবাহিনীও মাঠে নামিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এ সহিংসতায় বিপদে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত বিদেশিরা। বিশেষ করে দেশটিতে থাকা বড় সংখ্যক এশিয়ানদের ব্যবসা-বাণিজ্য জ্বালিয়ে দেওয়া ও লুটতরাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক বাংলাদেশি জানিয়েছেন তাদের দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। অনেকে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
১৯৯৮ সাল থেকে দেশটিতে বসবাস করছেন ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম। তিনি জানান, গত দুই যুগে সেখানে এমন পরিস্থিতিতে তারা কখনো পড়েননি।
আশরাফুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশিসহ বেশিরভাগ এশিয়ান দোকান, সম্পদে অগ্নিসংযোগ বা লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশিরই দোকানপাট আক্রান্ত হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। তাদের পরনে যে জামাকাপড় শুধু সেটিই আছে। এমনকি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
আশরাফুল আলমের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত বাংলাদেশি কাজ করেন। দেশটির রাজধানী বাবানেতে তার বাড়িতে এখন আশ্রয় নিয়েছেন নারী ও শিশুসহ আশেপাশের প্রায় ৬০ জন বাংলাদেশি। তাদেরই একজন বদরুজ্জামান চৌধুরী। তার একাধিক ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা রয়েছে দেশটিতে। এর মধ্যে একটিতে ভাংচুর করা হয়, বাকিগুলোতে হামলা করা হলেও নিরাপত্তাক্ষীরা সেগুলো রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।
বদরুজ্জামান বলেন, ‘‘অনেক বাংলাদেশি মিলে একটি জায়গায় থাকার চেষ্টা করছি। আমরা এখানে ৬০ জনের মতো একসঙ্গে আছি। এ ছাড়া মানজিনি নামের আরেকটি বড় শহরেও অনেকে একসঙ্গে থাকছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের খাবারে সংকট দেখা দেবে।”
ঘরে এসেও হামলা করা হতে পারে এমন আতঙ্কে ভুগছেন বাংলাদেশিরা। বদরুজ্জামান বলেন, ‘‘ওদের একটা মাইন্ডসেট হয়েছে আমরা বোধহয় ওদের সবকিছু নিয়ে নিচ্ছি। যারা আন্দোলন করছেন তারা হয়তো ওদের মনে এমন একটি বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।’’
এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অনেকে প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছেন। তবে পরিস্থিতির কারণেও সেটিও সম্ভব হচ্ছে না।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও মোজাম্বিকের সীমান্ত ঘেরা ছোট দেশটিতে বাংলাদেশের কোন দূতাবাসও নেই। সহায়তার জন্য তাই তারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন কাছের দূতাবাস প্রিটোরিয়াতে।
সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্বে থাকা নুর-ই হেলাল সাইফুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে।”
সেখানকার বাংলাদেশিদের সাউথ আফ্রিকায় স্থানান্তর সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘কারো যদি ভিসা থাকে তিনি চাইলে নিজ দায়িত্ব সাউথ আফ্রিকায় আসতে পারেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু করা হচ্ছে না। ওখানকার পরিস্থিতি এত খারাপ হয়নি যে সাউথ আফ্রিকা সরকার তাদের বিনা ভিসায় ঢুকতে দেবে। আমরা যোগাযোগ রাখছি, তাদের বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিচ্ছি। বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টা জানে৷ তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না পরিস্থিতি এত খারাপ যে ওই দেশ ত্যাগ করে চলে আসতে হবে।”
এদিকে সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জেনেভায় সংস্থাটির মুখপাত্র লিজ থ্রোশেল সাংবাদিকদের কাছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণের সমালোচনার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন।