Saturday, May 4, 2024
HomeScrollingপিতার মৃত্যু এবং সন্তানের ব্যর্থতা- মিরপুরে করোনায় মৃত ব্যক্তির ছেলের হৃদয়ছোঁয়া স্ট্যাটাস

পিতার মৃত্যু এবং সন্তানের ব্যর্থতা- মিরপুরে করোনায় মৃত ব্যক্তির ছেলের হৃদয়ছোঁয়া স্ট্যাটাস

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর মিরপুরে গত শনিবার। ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তিনি পরিবার নিয়ে যে বাসায় থাকতেন সেটি লকডাউন করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসে মৃত ওই ব্যক্তির ছেলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইকবাল আবদুল্লাহ মিরপুরের বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। । গণমাধ্যমে নানারকম বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ আসায় তিনি তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি পরিষ্কার করতেই এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন

নিচে ইকবাল আবদুল্লাহ’র ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

পিতার মৃত্যু এবং সন্তানের ব্যর্থতা-

আমি কখনো ভাবি নি যে আমার পিতার মৃত্যুর ঘটনা আমাকে এই ভাবে লিখতে হবে কিন্তু কিছু মিডিয়ার মিথ্যা রিপোর্ট দেখে আমি বাধ্য হলাম ফেসবুকে কিছু সত্য প্রকাশ করতে।

গত ১৬ তারিখে আব্বা আসুস্থ বোধ করলে আমাদের ড্রাইভার ঐ দিন বিকালে উনাকে কল্যানপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। ঐ সময় আমরা ভাইরা সবাই অফিসে। আমি অফিস থেকে বাসায় এসে শুনলাম ডাক্তার সাসপেক্ট করছে, উনার করোনা হয়েছে এবং কোভিড ১৯ টেস্ট এর জন্য সাজেস্ট করেছে। অতঃপর ঐ রাত্রেই আমরা উক্ত টেস্ট এর জন্য IEDCR এর হান্টিং নাম্বারে ফোন দেওয়া শুরু করি। প্রায় দেড় ঘন্টা পর তাদের সাথে আমরা কম্যুউনিকেশন করতে সমর্থ্য হই, তারা আমাদেরকে জানায় যেহেতু অসুস্থ ব্যাক্তি বিদেশ ফেরত না এবং বিদেশ ফেরত কোনো ব্যাক্তির সংস্পর্শে উনি আসেননি সেহেতু এই টেস্ট উনার জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, উনি নিয়মিত মসজিদে যান এবং ঐখান থেকে এই ভাইরাস আসতে পারে কিনা। তারা আমাদের বলেলেন যে, এই ভাইরাস বাংলাদেশের কমিউনিটিতে মাস লেভেলে এখনো সংক্রমিত হয়নি। সুতরাং আপনারা চিন্তা করবেন না, এটা সাধারন শ্বাস কষ্টের প্রব্লেম। ঐ রাত্রেই আনুমানিক ১০.৩০ এ আমি উনাকে শ্যামলীর একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং আমাদের পরিচিত একজন স্পেশালিষ্ট ডক্টরকে দেখাই। উনি আমাকে বলেন, রুগীর নিউমোনিয়া হয়েছে, উনাকে নিউমোনিয়ার ট্রিটমেন্ট দিতে হবে, তবে বাংলাদেশের কোনো হাসপাতাল এই রুগির ভর্তি নিবে না, আপনারা বাসায় ট্রিটমেন্ট করেন। আমি ঐ রাত্রে বাসায় চলে আসি এবং আব্বাকে নেবুলাইজার এবং মুখে খাওয়া এন্টিবায়োটিক দিতে থাকি। পরের দিন ১৭ তারিখে দুপুরে আমি আব্বাকে নিয়ে যাই শ্যামলীর ঐ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। তারা রুগি দেখে বলেন যে, রুগির অবস্থা ভালো না, উনাকে আইসিউ সাপোর্ট দিতে হবে কিন্তু তাদের আইসিউ তারা দিতে পারবে না। এরপর আমি কেয়ার হাসপাতালে কথা বলি। ওরা বলে ওদের আইসিউ খালি আছে। আমরা দ্রুত আব্বাকে নিয়ে কেয়ার হাসপাতালে যাই এবং আইসিউতে ভর্তি করি। ১৫ মিনিট পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বললেন, এই রুগী তারা রাখতে পারবে না। অতঃপর আমরা রুগী নিয়ে কল্যানপুরের একটি হাসপাতালে যাই। তারা আমাদেরকে কেবিন দিয়ে সাহায্য করে কিন্তু তাদের আইসিউ খালি নেই। আমি তখন স্কয়ারে ফোন দিলাম আইসিউ এর জন্য। কিন্তু স্কয়ার আমাদেরকে বললো, রুগী ছাড়া শুধু কাগজ পত্র নিয়ে আসতে। তারা কাগজ পত্র দেখে ভালো মনে করলে রুগী ভর্তি করবে। রাত আনুমানিক ১২.৩০ এ হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে বললেন এই রুগীর আইসিউ লাগবে, আপনারা দ্রুত আইসিউ এর ব্যবস্থা করেন। আমি বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলতে থাকি, কোথাও আইসিউ খালি নেই। অতঃপর ডেল্টা হাসপাতাল তাদের আইসিউ দিতে রাজি হয়। আমি এবং আমার ছোট ভাই রাত্রে ৪ টার সময় আব্বাকে নিয়ে ডেল্টাতে আসি এবং দুপুর ১২টার পর থেকে আব্বা লাইফসাপোর্টে চলে যান। ১৮ তারিখ দুপুর থেকে আমরা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ IEDCR এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। অতঃপর ১৯ তারিখ বিকালে IEDCR রাজি হয় এবং রাত্রে টেস্ট করে এবং পরের দিন ২০ তারিখ দুপুরে তারা আমাদেরকে জানায় যে রিপোর্ট পজেটিভ। আমাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে ১৫ দিন।

রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর থেকে ডেল্টা হাস্পাতাল আমাদের প্রেশার দিতে থাকে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়ার অনুমোদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা অনুমতি না দিয়ে তাদেরকে বলতে থাকি ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আর রুগীর কাছেও যায় নি এবং আমাদেরকে আইসিউ এর ভেতর ঢুকতেও দেয় নি। যাই হোক আমার আব্বু আবশেষে ২১ তারিখ ভোর তিন টার সময় ইন্তেকাল করেন।

আমরা সন্তানরা ব্যর্থ পিতার সঠিক ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে এবং এমনকি তার জানাজাতে উপস্থিত থাকতে। সন্তান হিসেবে, একজন পুত্র হিসেবে এর চেয়ে কঠিন কষ্ট আর কিছুই হতে পারে না। আমরা বুকে পাথর বেঁধে বাসায় অবস্থান করছি সরকারের আইন মেনে ১৫ দিনের জন্য। কিন্তু কিছু পেইজ এবং ফ্রন্ট লাইনের মিডিয়া আমাদেরকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে, আমার ভগ্নিপতি বিদেশ থেকে আমাদের বাসায় এসেছে, যেটা সম্পুর্ণ মিথ্যা কথা। আমার দুই ভগ্নিপতি। বড় বোন এবং তার হাজবেন্ড চিটাগং এর দুটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক। অন্য ভগ্নিপতি জাপান থাকে। সে গত এক বছরের মধ্যে দেশে আসেনি। আমার বাবা যেদিন আইসিউতে লাইফ সাপোর্ট এ চলে যান সে দিন মানে, ১৯ তারিখ আমার বড় বোন এবং দুলাভাই চিটাগং থেকে আমাদের বাসায় আসেন এবং বর্তমানে তারাও আমাদের সাথে হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করছে।

আমাদের এই বিপদের সময় দয়া করে আমার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা রিপোর্ট করবেন না। এখন পর্যন্ত আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা সুস্থ আছে। কারো মধ্যে করোনার লক্ষন দেখা দেয়নি। আমার ছোট ভাই এবং ড্রাইভার অসুস্থ বোধ করায় কভিড ১৯ টেস্ট করানো হয়েছে যার ফল নেগেটিভ এসেছে। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করেন এবং হেফাজত করেন বাংলাদেশের সবাইকে আমিন.।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments