বরিশালের দুই মাস্টারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মেরিন আদালতের মামলায় জামিন বাতিলের ঘটনায় নৌ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মাস্টার-শ্রমিকরা। ওই দুই মাস্টারের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ঢাকা সদরঘাটের পন্টুন থেকে লঞ্চ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আকস্মিক ধর্মঘটে বেকায়দায় পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা।
সোমবার দুপুর ২টা থেকে ঢাকার মেরিন আদালতে যাত্রীবাহী নৌযানের দুই মাস্টারের (চালক) জামিন বাতিলের প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশালসহ দেশের সব দূরপাল্লা রুটে নৌযান ধর্মঘট শুরু করে শ্রমিকরা।
বরিশাল নদী বন্দরের পন্টুন থেকেও ঢাকা অভিমুখী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দুপুরের যারা লঞ্চে উঠেছিলেন তাদের নামিয়ে দিয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে ঢাকাগামী সকল লঞ্চ।
নৌ শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে গেছে জানিয়ে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী বলেন, কোথায় দুর্ঘটনায় ঘটেছে, তার হদিস নেই, চার মাস এই দুজনের সার্টিফিকেট ‘হোল্ড’ করে রাখা হয়েছিল। জামিন না দেওয়ায় কোনো কারণ ছিল না। শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানাতে ঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে নিয়েছে।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল জেলা সভাপতি শেখ আবুল হাসেম জানান, বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার রুহুল আমীন এবং এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার জামাল হোসেন সোমবার ঢাকার মেরিন আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক জুনায়দা বেগম। এ ঘটনায় নৌযান শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ হয়। কারাবন্দী দুই নৌযান মাস্টারের মুক্তির দাবিতে তাৎক্ষণিক ধর্মঘট শুরু করেন তারা।
এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার কবির হোসেন জানান, কারাবন্দী দুই নৌযান মাস্টারকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
অ্যাডভেঞ্চর লঞ্চ কোম্পানির মালিক মো. নিজাম উদ্দিন জানান, ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘন কুয়াশার কারণে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা নদীতে এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯ এবং এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের মধ্যে সংঘাত হয়। এতে কোনো লঞ্চের কোনো ক্ষতি কিংবা কোনো হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগও ছিল না। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিআইডব্লিউটিএ মেরিন আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। ওই দুই লঞ্চের দুই মাস্টার নিয়মিত হাজিরার অংশ হিসেবে ঢাকার মেরিন আদালতে হাজিরা দেন। আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এদিকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া আকস্মিক দূরপাল্লা রুটের যাত্রীবাহী নৌযানে ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। তারা অনতিবিলম্বে নৌযান ধর্মঘট নিরসনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।