বাংলাদেশের ঢাকা টেস্টের শুরুটা হয়েছিল বিভীষিকাময়। সকালে যে কালো মেঘ ভর করেছিল মিরপুরের আকাশে— তা অবশ্য কেটে গেছে। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে মিরপুরের আকাশকে সারাদিন আলোতে ভরিয়ে রাখলেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।
টসে জিতে প্রথম ইনিংস শুরুর পর মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে স্বাগতিকেরা; তখনই প্রতিরোধ গড়লেন উভয়ে। দিন শেষে যখন মাথা উঁচিয়ে মাঠ ছাড়ছেন তখন মুশফিকের পাশে জ্বলজ্বল করছে অপরাজিত ১১৫ রান আর লিটনের পাশে ১৩৬*।
প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাট করেছে ৮৫ ওভার। তাতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৭৭ রান। প্রথম সেশন শুরুর ৪০ মিনিটে এই পাঁচ উইকেট হারায় টাইগাররা। এরপর বাকি সময়টা শাসন করলেন মুশফিক-লিটন। নিলেন শ্রীলঙ্কানদের ধৈর্যের পরীক্ষা।
৪৬৯ বলে দু’জনে গড়েছেন ২৫৩ রানের জুটি। যা টেস্টে টাইগারদের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটির মধ্যে যা পঞ্চম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। ষষ্ঠ উইকেটে টাইগারদের আগের জুটিটি ছিল ১৯১ রানের। সেখানেও আছে মুশফিকের নাম। লঙ্কানদের বিপক্ষে ২০০৭ সালে কলম্বোতে মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে এই জুটি গড়েছিলেন মুশফিক।
মিরপুরে দিনের শুরুতে সেই অধারাবাহিক চিরচেনা বাংলাদেশ। সফরকারীদের দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আশিথা ফার্নান্দো মিলে তছনছ করে দেন স্বাগতিকদের টপ-অর্ডার। দলীয় ৬ রানে দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম ইকবাল ফেরেন শূন্য হাতে। দলের প্রয়োজনে ফের ব্যর্থ অধিনায়ক মুমিনুল হক (৯)। নাজমুল হাসান শান্তর (৮) বিদায়ে আরও বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। এরপর রাজিথা নিজের তৃতীয় শিকার হিসেবে গোল্ডেন ডাক উপহার দেন সাকিব আল হাসানকে।
সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে তৃতীয় সেশনে এসে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি উদযাপন লিটনের। সেই ঘুচালেন আক্ষেপও। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১২ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে মাস্টারক্লাস ব্যাটিংয়ে মুশফিক পেলেন ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরি। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ৯ম শতক।
কেন মুশফিকের নাম ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ তা আরেকবার প্রমাণ দিলেন ৩৫ বছর বয়সী ব্যাটার। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন ১০৫ রানের জুটি। এবার ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন শেষ করলেন ২৫২ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত থেকে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৩ চারে।
অন্যদিকে সাতে ব্যাটিংয়ে নামা লিটন কখনো ধৈর্যের প্রতিমূর্তি তো কখনো রুদ্রমূতি। ২২১ বলে ১৩৫ রানের ইনিংস খেলার পথে হাঁকিয়েছেন ১৬ চার ও ১ ছয়।