দৃশ্যমান হলো স্বপ্নের পুরো পদ্মাসেতু। যুক্ত হয়েছে পদ্মার দুই পাড় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর ‘টু-এফ’ নামে ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্যদিয়ে পদ্মার দুই পাড়ে সেতুবন্ধন তৈরি হয়। এতে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। সে হিসেবে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিনে বসানো হলো সেতুর সব কয়টি স্প্যান। প্রথম স্প্যানের প্রায় ৪ মাস পর ২০১৮ সালে ২৮ জানুয়ারী দ্বিতীয় স্প্যান বসে। এর দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। আরো দুই মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এরপর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় ২৯ জুন পঞ্চম স্প্যান বসে। ৬ মাস ২৫ দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যান। ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ২০১৯ সালে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের ওপর বসে অষ্টম স্প্যান। ২২ মার্চ বসে নবম স্প্যান এবং মাওয়া প্রান্তে ১০ এপ্রিল বসে দশম স্প্যান।
১৩ দিনের ব্যবধানে জাজিরা প্রান্তে ২৩ এপ্রিল স্থায়ীভাবে বসে একাশদ স্প্যান। ৬ মে দ্বাদশ স্প্যান, ২৫ মে ১৩তম স্প্যান, ২৯ জুন ১৪তম স্প্যান, ২২ অক্টোবর ১৫তম স্প্যান, ১৯ নভেম্বর ১৬তম স্প্যান, ২৬ নভেম্বর ১৭তম স্প্যান, ১১ ডিসেম্বর ১৮তম স্প্যান, ১৮ ডিসেম্বর ১৯তম স্প্যান, ৩১ ডিসেম্বর ২০তম স্প্যান বসে।
২০২০ সালে ১৪ জানুয়ারি ২১তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি ২২তম স্প্যান, ২ ফেব্রুয়ারি ২৩তম স্প্যান, ১১ ফেব্রুয়ারি ২৪তম স্প্যান, ২১ ফেব্রুয়ারি ২৫তম স্প্যান, ১০ মার্চ ২৬তম স্প্যান, ২৮ মার্চ ২৭তম স্প্যান, ১১ এপ্রিল ২৮তম স্প্যান, ৪ মে ২৯তম স্প্যান, ৩০ মে ৩০তম স্প্যান, ১০ জনু ৩১তম স্প্যান।
এরপর বন্যার কারণে চার মাস পর ১১ অক্টোবর বসে ৩২তম স্প্যান। ১৯ অক্টোবর ৩৩তম স্প্যান, ২৫ অক্টোবর ৩৪তম স্প্যান, ৩১ অক্টোবর ৩৫তম স্প্যান, ৬ নভেম্বর ৩৬তম স্প্যান, ১২ নভেম্বর ৩৭তম স্প্যান, ২১ নভেম্বর ৩৮তম স্প্যান, ২৭ নভেম্বর ৩৯তম স্প্যান ও ৪ ডিসেম্বর ৪০তম স্প্যান বসানো হয়।
পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি সাড়ে ৮২ শতাংশের বেশি। মূল সেতুর কাজের বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮৮.৩৮ শতাংশ। মূল সেতুর কাজের চুক্তি মূল্য ১২ হাজার ১৩৩.৩৯ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩ দশমিক ৬৩ কোট টাকা। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫.৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৫.১৭ শতাংশ। নদীশাসন কাজের চুক্তি মূল্য ৮ হাজার ৭০৭.৮১ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৬৭৪.৪৮ কোটি টাকা।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
দুটি সংযোগসড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ২০২১ সালেই খুলে দেওয়া হবে।