Wednesday, July 2, 2025
HomeScrollingরোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধে দুই মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধে দুই মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলছে, দুটি মানবাধিকার সংস্থাই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ৪ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি করেছে যাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে।

বাংলাদেশের সরকারের উচিত একটি স্বচ্ছ স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শরণার্থীদের বুঝে-শুনে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এবং দ্বীপটিতে যাওয়া-আসার অনুমতি সাপেক্ষে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।

সেই সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বান অনুযায়ী একটি স্বাধীন কারিগরি এবং সুরক্ষা বিষয়ক মূল্যায়ন পরিচালনা করা উচিত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “মানবিক পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সম্মতি বা সবুজ সংকেত ছাড়া শরণার্থীদের ভাসান চরে স্থানান্তর না করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের কাছে যে ওয়াদা করেছিল তা থেকে সরে আসছে।”

তিনি বলেন, সরকার যদি ভাসান চরে বসবাসের উপযোগিতা নিয়ে নিশ্চিতই হয়ে থাকে তাহলে তা স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং জাতিসংঘের কারিগরি মূল্যায়নকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত স্থানান্তর শুরু করা উচিত নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসজি টেরিঙ্ক বলেন, ভাসানচরে জাতিসংঘের পূর্ণ কারিগরি ও মানবিক মিশন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত স্থানান্তর নিয়ে কোন কথা বলবে না ইইউ।

বাংলাদেশে সরকার বলছে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শরণার্থীদের ইচ্ছাতেই হচ্ছে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে, স্থানান্তর করা হবে এমন অন্তত ১২টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। যাদের নাম তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় স্থানান্তর হতে চান না বলে মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছেন। এই তালিকায় থাকা কিছু শরণার্থী জোর করে স্থানান্তরিত হওয়ার ভয়ে পালিয়েছেন বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।

কয়েক জন শরণার্থীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংস্থাটি বিবৃতিতে জানায়, তারা ভাসান চরে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয়েছে কারণ মাঝি এবং ক্যাম্প-ইন-চার্জরা তাদের বলেছে যে, সেখানে মাছ ধরা কিংবা কৃষিকাজ করার মতো জীবিকা উপার্জনের পথ বেছে নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সন্তানদের শিক্ষালাভের সুযোগ থাকবে।

ভাসান চর সম্পর্কে সরকার পরিপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, চরটিতে এরই মধ্যে যে ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন তাদের অবস্থা নাজুক। তাদের চলাফেরা স্বাধীনতা নেই এবং স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার কোন সুযোগ নেই।

সংস্থাটি বলছে, “রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দাতা দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া উচিত।”

এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভাসান চরে স্থানান্তর অনতিবিলম্বে বন্ধ করে সেখানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনা উচিত।

দুর্গম ওই দ্বীপটিতে যেখানে মানবাধিকার গ্রুপ ও সাংবাদিকদের আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতির স্বাধীন পর্যবেক্ষণ করাটাও হুমকির মুখে পড়বে।

চরটিতে স্থানান্তর শুরুর আগে বাংলাদেশ সরকারের সেখানে জাতিসংঘ মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সংস্থাগুলোকে বসবাসের উপযোগিতার বিষয়টি মূল্যায়নের সুযোগ দেওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে বুধবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসংঘ অবগত থাকলেও শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা তাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি।

এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে তথ্যও খুবই কম আছে বলে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে গুরুত্বারোপ করা হয় যে, স্থানান্তর যাতে স্বেচ্ছায় হয় সে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের নিশ্চিত করা উচিত।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments