Sunday, May 19, 2024
HomeScrollingস্কুলবাসে ঘর-সংসার

স্কুলবাসে ঘর-সংসার

বসবাসের জন্য ভ্রমণপ্রিয় অনেকের কাছেই বাসের কদর বাড়ছে। বাসেই তারা সাজিয়ে নিচ্ছেন সংসার। কোনো নির্দিষ্ট ঘর ভাড়া না করে পরিবারের সবাই মিলে বাসেই থাকছেন। অফিশিয়াল কাজও করছেন বাসেই। ঘুরে ঘুরেই বেশ কেটে যাচ্ছে তাদের জীবন। ভিন্নরকম জীবন কাটানো এমনই এক পরিবারকে নিয়ে লিখেছেন আরফাতুন নাবিলা

ভ্রমণের শুরু

নিজের বাড়ি ও সব জায়গা-জমি বিক্রি করে, চার চাকায় ভর করে যদি পৃথিবী ঘোরার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে সত্যি সত্যি সে সুযোগ কি আপনি নেবেন? হয়তো ভাববেন, এমন ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন সত্যিই খুব সুন্দর। কিন্তু এ আর কীভাবে পূরণ হবে? ভ্রমণপ্রিয় ক্রিস্টিন আর উইল ইতিমধ্যে এই স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছেন। বিয়ের পর দুজনে মিলে অদ্ভুত এই স্বপ্নকে পূরণ করার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে এখনো দিব্যি ভালো আছেন।

বাসে সংসার করার আগে উইল ও ক্রিস্টিন দম্পতি ২০১৪ সাল থেকে ভাড়া করা গাড়িতে থাকতেন। ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল থেকে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। তবে গাড়িতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত না। কীভাবে এটিকে আরও বড় পরিসরে করা যায় তাই নিয়ে দুজনে ভাবছিলেন। ২০১৬ সালে তারা একটি ভিডিও দেখেন। কোন জিনিস ঠিক কতটুকু ছোট আকারে সাজিয়ে নেওয়া যায়, কোন জিনিসের প্রয়োজন আছে, কোনটির নেই এসব নিয়ে সেই ভিডিও থেকে তারা অনেক কিছু শিখতে পারেন। এরপর উইল তার বাবার সঙ্গে মিলে দুজনে থাকা যাবে এবং ইচ্ছেমতো ভ্রমণ করা যাবে এমন একটি বাস ঠিকঠাক করা শুরু করেন। একইসঙ্গে ঘর ও বাহনের কাজ করবে এমনভাবে দুই বছরেরও বেশি সময় নিয়ে উইল ও তার বাবা মিলে বাসের কাজ করেন। এরই মধ্যে তাদের জীবনে আসে ছোট্ট মেয়ে রোম। মাত্র ছয় মাস বয়সে রোম বাবা-মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ শুরু করেছিল আর অনেক কম বয়সেই জীবনের অধিকাংশ সময় সে কাটিয়ে দিচ্ছে ভ্রমণেই। কোনো নতুন জায়গায় গিয়ে তারা অন্তত চারদিন থাকেন, ভালো লাগলে আরেকটু বেশি। ভেতরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য সাদা রং ও কাঠের মেঝে দেওয়া হয়েছে। তবে বাসে থাকলেও তাদের যে অন্যান্য খরচ দিতে হয় না এমন নয়। গ্যাস ও অন্যান্য ভ্রমণ খরচ তাদের নিয়মিতই করতে হয়।

ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিল থেকে একটি স্কুলবাস নিয়ে বের হয়ে পড়েন তারা। বের হওয়ার আগে স্কুলবাসটিকে সাজিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের মতো করে। দুটো বেডরুম, একটি বাথরুমসহ বাসের ভেতরেই আছে রান্নাঘর। ছোট্ট রোম আর কুকুর রাশকে নিয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাসেই সংসার করছেন তারা।

বাসের ভেতরে

উইল ও ক্রিস্টিন যে বাসে থাকেন সেটির নাম ‘নাম্বার জুয়ান’। এটি ব্লু বার্ড সিরিজের একটি বাস। ১৯৪৮ সালে বাস চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই বাসের নকশায় পরিবর্তন এসেছে। এই দম্পতি যে বাস ব্যবহার করছেন সেটি ১৯৯২ সালের নকশার। বাসের পরিচয় ‘১৯৯২ ব্লু বার্ড’ হিসেবেও বলা যায়। বাসের ভেতরে যে ফিচারগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলো একদম ইউনিক। জীবন যাপনের জন্য যা প্রয়োজন তার সবই বাসে তারা যুক্ত করে নিয়েছেন।

জ্যাকসনভিল বিচে একটি ব্রিজ ছিল যেটি ২০১৬ সালের হারিকেন ম্যাথুয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে একটি টুকরো এনে ব্যবহার করা হচ্ছে কিচেন কাউন্টারটপ হিসেবে। এর ওপর দুই স্তরে ইপক্সি রেজিন দেওয়ায় টুকরোটি বেশ চকচকে দেখায়। জ্যাকসনভিল এলাকারই বাসিন্দা বলে অসাধারণ এই জিনিসটি পেতে তাদের একদমই বেগ পেতে হয়নি। অল্প জায়গায় নান্দনিক এই জিনিসটি উইল ও ক্রিস্টি দুজনেরই বেশ পছন্দ। সিংকের যে কল আছে সেটিও বেশ মজার। এটি আমাদের রান্নাঘরে ব্যবহৃত সাধারণ কলের মতো নয়। কলটি নাড়ানো যায় বিধায় জানালা দিয়ে বের করে বাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ঝরনার মতো করেও এটি ব্যবহার করা যায়। সিংকের নিচের অংশে ঢাকনা হিসেবে যেটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি আসলে চার পায়া ভাঁজ করে রাখা একটি টেবিল। বাসের ভেতর ও বাইরে যে কোনো জায়গায় এই টেবিল বিছিয়ে কাজ করা যায়। রান্নার জন্য যে চুলা ব্যবহার করা হয় সেটির তিনটি বার্নার আছে। সঙ্গে রয়েছে একটি ওভেনও। চুলা ছাড়াও খাবার বানানো নিয়ে কোনো ধরনের ঝক্কিই পোহাতে হয় না এই দম্পতিকে। ছোট্ট রান্নাঘরে প্রয়োজনীয় সব জিনিস রাখার জন্য আছে কেবিনেট ও ড্রয়ার। রান্নাঘরের সঙ্গেই লাগোয়া আছে একটি নরকোল্ড রেফ্রিজারেটর। এতে এসি, ডিসি ও এলপি পাওয়ার তিনটাই আছে। রান্নাঘরের পাশেই রয়েছে একটি ডাবল বেড কাউচ, তবে এটি ভাঁজ করা যায় বলে সব সময় সিঙ্গেল হিসেবেই রাখা হয়। এর ব্যবহার হয় কোনো মেহমান এলে। কাউচটি বাসের দেয়ালের সঙ্গে লাগানো হয়েছে যেন মাঝ দিয়ে হাঁটা যায়।

উইল যে কম্পিউটারে বসে কাজ করেন সেটাও বেশ আধুনিক। জানালার সঙ্গে টেবিলে রাখা আছে কম্পিউটার। প্রতি সপ্তাহেই তাদের বাস ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকে। কাজ করার সময় তাই সামনে একেকদিন একেক রকম পরিবেশ দেখা যায়। এই কম্পিউটারের মনিটরটাও একটি টিভি। কাজের সময় মনিটর একদম সামনে আবার বিছানায় শুয়ে টিভি দেখার সময় এটিকে বেশ উঁচু করেও রাখা যায়।

বাসের ভেতর ছোট্ট বাথরুমটা বেশ আকর্ষণীয়। বাথরুমের দরজাটি হাতে বানানো, স্লাইড করা যায়। টয়লেট থেকে সরাসরি সার তৈরি হবে এমনভাবে এটিকে প্রস্তুত করা হয়েছে। বাথরুমে ব্যবহার করা হয়েছে সাবওয়ে টাইলস যার কারণে গোসল করলেও দেয়াল ভিজে নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। এছাড়া বাথরুমের সবকিছুই ওয়াটারপ্রুফ, যার কারণে ছোট জায়গায় গোসল করলেও কোথাও পানি জমে থাকে না। সোলার পাওয়ারে ব্যবহার করা লাইটও লাগানো আছে বাথরুমে। প্রতি দুই সপ্তাহে বাসের ওয়াটার সাপ্লাই পদ্ধতিকে রিফিল করা হয় যেন পানির সমস্যা না হয়।

বাথরুমের পাশেই আছে ক্লোজেট। এখানে তিনটি ড্রয়ার বানানো হয়েছে সøাইড সিস্টেমে। তিনজনের কাপড় বেশ ভালোভাবেই এই ক্লোজেটে রাখা যায়। এই ক্লোজেট নিয়ে ক্রিস্টিনের মন্তব্য বেশ মজার। ‘আমি এমন একজন মানুষ, যার পুরো একটি রুমই ছিল একটি ক্লোজেট, আর এখন এত অল্প জায়গার মধ্যে আমাদের তিনজনের কাপড় রাখতে হয়।’ তবে এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন ক্রিস্টিন। প্রিয় মানুষের সঙ্গে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ আনন্দই অন্যরকম।

বাসের ভেতর রোমের জন্য বিছানা বানানো যদিও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে দুজনে মিলে দারুণ একটি বুদ্ধি বের করেছেন এর জন্য। বক্সের মতো একটি জায়গা আছে যেখানে বিভিন্ন জিনিস রাখা হয়, তার ওপর ফোম বসিয়ে বানানো হয়েছে রোমের বিছানা। আর ফোমের চারপাশ জুড়ে সেলাই করে মশারির মতো শক্ত এক ধরনের কাপড় দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। তাতে রয়েছে একটি চেইন। যেটি সহজেই খুলে ও লাগিয়ে রোমকে ভেতরে রাখা ও বের করা যায়। রোমের বিছানার পাশেই উইল ও ক্রিস্টিনের বিছানা। পুরো বাসের ভেতর এই বিছানাটিই সবচেয়ে বড় জিনিস। ডাবল সাইজের এই বিছানায় ক্রিস্টিন, উইল আর পোষা কুকুর রাশ একত্রে ঘুমায়। বিছানার নিচে আরও কিছু জায়গা আছে যেখানে নানা ধরনের জিনিস রেখে দেওয়া হয়েছে। এই বিছানারও একটা মজার ব্যাপার আছে। সুইচের মাধ্যমে এটিকে এক সময় বিছানা আবার এক সময় বক্স হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। উইল বলেন, ‘সুইচ চাপলে খুব সহজেই এটিকে বিছানা বানিয়ে ফেলা যায়। প্রথমে আমরা যখন বাস ডেকোরেট করেছিলাম তখন এটি ছিল না। এটি বানানো হয়েছে পরে। তবে যখন থেকে এটি বানিয়েছি, বলতে গেলে অবস্থাই একদম বদলে গেছে। এখন বাসে থাকতে আগের চেয়ে বেশি ভালো লাগে।’ একেকদিন একেক পরিবেশে রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে রাতের আকাশ আর সকালের সূর্য দেখতে উইল ও ক্রিস্ট দুজনেই দারুণ পছন্দ করেন। বাসের ভেতর নিতান্ত দরকারি ছাড়া খুব বেশি জিনিস তারা রাখেননি।

বাসে ড্রাইভিং করার যে জায়গাটুকু আছে সেটিকে ক্রিস্টিন ব্যবহার করেন অফিস হিসেবে। বাসের স্টিয়ারিংয়ের জায়গায় একটি কাঠের টুকরো বসিয়ে টেবিল বানিয়ে নেন ক্রিস্টিন। এই কাঠের টুকরোটির ওপর রেজিন দেওয়া আছে যার কারণে এটি দেখতে বেশ চকচকে আর কাঠের খসখসে ভাবও এতে নেই। ক্রিস্টিন ও উইল দুজনেই দূরে থেকে কাজ করেন। ক্রিস্টিন সেকেন্ড হোম ভ্যাকেশন কমিউনিটির একজন কমিউনিকেশন ম্যানেজার আর উইলের একটি নিজস্ব ক্রিয়েটিভ মার্কেটিং কোম্পানি আছে। পুরো বাসে ওয়াই-ফাই সংযোগ নেওয়া আছে। দুজনে যেখানেই যান না কেন, তাদের কাজে কখনো কোনো সমস্যা হয় না।

বাসের বাইরে

বাসের ভেতরটা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি বাইরেটাও মনোমুগ্ধকর। বাসের ওপরে ছোট ছোট লাইট লাগানো আছে যেগুলো রাতের বেলা জ্বালালে দূর থেকে দেখা যায়। নিচের অংশে একটি রেইল আছে স্কেট করার জন্য। কিছুটা কাস্টমাইজ করে এটাকে উইল এমনভাবে সাজিয়ে নিয়েছেন যেন সহজেই এর সাহায্যে স্কেট করা যায়। নতুন কোনো বন্ধুর দেখা পেলে বা পুরনো বন্ধু তাদের কাছে এলে সবাই মিলে বেশ মজা করে স্কেট করেন। আবার এটিকে ব্যবহার করা যায় বেঞ্চ হিসেবেও। উইল বলেন, ‘আমি একজন স্কেটবোর্ডার। যে কোনো জায়গায় স্কেট করার জন্য এই বোর্ড বেশ কাজে দেয়। অচেনা জায়গাগুলোতে স্কেট করতে তাই আমাকে একদম ভাবতে হয় না। আর বেঞ্চ হিসেবেও এটিকে সহজেই ব্যবহার করা যায়।’

বাসের ছাদে লাগানো আছে ৫০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল। এসিও আছে, যেটি প্রচণ্ড গরমে তাদের বেশ আরাম দেয়। এছাড়াও ভেতরে রাখা সম্ভব না হলে বাইরেও যেন কোনো জিনিস রাখা যায় সেজন্য ছাদেও কাঠ দিয়ে বাড়তি স্টোরেজ স্পেস বানানো হয়েছে। বাসের বাম্পারে তিন ফিটের একটি বোর্ড বানানো হয়েছে যেখানে রাখা আছে একটি মোটরবাইক। দুজনে মিলে বাসে বসে থাকতে থাকতে কখনো ক্লান্ত হয়ে গেলে বাইক নিয়ে বেশ খানিকটা ঘুরে আসেন। এছাড়াও বাস নিয়ে সব জায়গায় যাওয়া যায় না। কাছাকাছি দূরত্বের কোনো জায়গায় যেতে অথবা দোকান থেকে কিছু কিনে আনতেও বাইক নিয়ে সহজেই কাজ করে আসা যায়।

রোমের বড় হওয়া

উইল আর ক্রিস্টিনের সঙ্গে রাস্তার সঙ্গী এখন ছোট্ট রোমও। সন্তানকে নিয়ে এভাবে ঘুরতে বেশ ভালোবাসেন এই দম্পতি। ক্রিস্টিন বলেন, ‘এই ব্যাপারটি আসলেই অসাধারণ। রোম আমাদের জন্য জ্যাকপট। ও আসার পর থেকে ভ্রমণের দৃশ্যই আমাদের কাছে বদলে গেছে। ও ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসে। হাইকিং করতে, বাইরে খেলতে আর নতুন নতুন অ্যাডভেঞ্চারে যেতেও দারুণ ভালোবাসে। অনেকেই ভাবতে পারেন এত ছোট জায়গায় কীভাবে একটি বাচ্চা বড় হচ্ছে। সত্যি বলতে আমরা আসলে বেশিরভাগ সময় বাইরেই কাটাই। আমাদের কখনো মনে হয় না, কোনো ছোট্ট ঘরে আমরা বাচ্চাকে বড় করছি। সে নিজেও এভাবে বাসে থাকাকে বেশ উপভোগ করে।’ দুই বছর বয়সেই রোম দুটি দেশ আর ৩০টি জায়গা ভ্রমণ করে ফেলেছে।

ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

নতুন জায়গা মানে নতুন অভিজ্ঞতা। আর এই দম্পতির জন্য এটাই সবচেয়ে ভালোলাগার। ক্রিস্টিন বলেন, ‘আমরা ভ্রমণ ভালোবাসি বলেই নতুন নতুন জায়গায় যাই, ঘুরে বেড়াই, অভিজ্ঞতা নিই।’ রাস্তায় চলতে চলতে তাদেরও অনেক সময় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তবে এ নিয়ে সব সময় চিন্তা হয় এমনও নয়। তারা জানেন এভাবে চলতে গেলে কিছু বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। তাদের জন্য বিষয়টি এখন বেশ স্বাভাবিক। যেভাবেই হোক তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ফেলেন।

আর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এমন ঘটনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন দুজন। দুর্দান্ত এই ভ্রমণ শুরুর আগে উইল ও ক্রিস্টিন মিলে তাদের যত ঋণ ছিল সব শোধ করে দিয়েছিলেন। যার কারণে ভ্রমণে এখন তাদের কোনো পিছুটান নেই, স্বাধীনতা এখন অনেক বেশি।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments