মাদারীপুর প্রতিনিধি।।
ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন মাদারীপুর জেলার শিবচরের যুবক সজিব সরদার(২৮)। প্রায় ৮ মাস পর বাড়ি ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে! ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে বন্দী করা হয় সজিবকে। এরপর দফায় দফায় বিক্রি, মারধর আর পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় বিপুল পরিমান টাকা। ছেলের মুক্তির জন্য জায়গা-জমি বিক্রি করে ৪৬ লাখ টাকা দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দালালের নির্যাতনে চলতি বছরের গত ২০ মার্চ সজিব মারা যায় বলে খবর আসে বাড়িতে। এর আগে লিবিয়ার বন্দীশালায় মারধরের ভিডিও চিত্র পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দফায় দফায় হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা!
বুধবার (২৮ মে) নিহতের মরদেহ বাড়ি পৌছালে শোকের মাতম উঠে আরেকবার। সন্তান হারিয়ে ২ মাস ধরে নির্বাক মা-বাবা-বোনসহ স্বজনেরা। এবার শেষ বারের মতো দেখার প্রতীক্ষার অবসান হলো যেন নিঃস্ব এই পরিবারের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে লিবিয়া পৌছায় শিবচরের নিলখী ইউনিয়নের বাগমারা এলাকার চান মিয়া সরদারের ছোট ছেলে সজিব সরদার। মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া এলাকার দালাল বোরহান বেপারীর মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালির নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়া নেয়। সেখান থেকে সরাসরি ইতালি নেয়ার জন্য গেম দেবার কথা বলে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দুই দফা বিক্রি করে সজিবকে। মারধর করে দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র। দালালের মারধরের শিকার হয়ে গত ১৯ মার্চ মারা যায় সজীব। পরের দিন মৃত্যুর খবর আসে পরিবারের কাছে।
নিহতের স্বজনেরা জানান,’মারা যাওয়ার পর লিবিয়ার এক হাসপাতালের মর্গে ছিল সজিবের লাশ। আমরা লাশ দেশে আনার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে প্রায় ২ মাসের মাথায় বুধবার(২৮ মে) সকালের ফ্লাইটে লাশ বাংলাদেশে আসে।’
নিহতের চাচাতো ভাই মইনুল হক বলেন,’এ ঘটনায় দালালের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। লাশ বাড়ি আসার পর পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। আমাদের দাবি মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র লিবিয়ায় আটকে রেখে সজিবকে মেরে ফেলেছে। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাই দালালের।’
নিহতের বাবা চানমিয়া সরদার বলেন,’আমার ছেলে ইতালি নেয়ার কথা বলে বোরহান দালাল লিবিয়া নিয়ে বিক্রি করে দেয়। দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা নিছে। আমার সহায়-সম্পত্তিও গেলো, ছেলেও গেলো। আজ (বুধবার) ছেলে লাশ আসলো। এতোদিন পর ছেলের মরামুখ দেখলাম!’
নিহত সজিবের বোন শামীমা আক্তার বলেন,’দালালের নির্যাতনে ভাই মরলো। আজ ভাইর লাশ আসলো বাড়িতে। এই রকম বাড়ি আসা তো আমরা চাইনি। বিদেশ থেকে ভাই আসবে। কত আনন্দ হবে আমাদের। অথচ ভাই এলো লাশ হয়ে!’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দালালের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিবচর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) মো.শাজাহান মিয়া বলেন,’এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
LN24BD /Imtiaz