Tuesday, July 1, 2025
HomeScrolling৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় গাইবান্ধা

৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় গাইবান্ধা

আশরাফুজ্জামান সরকার,গাইবান্ধা।।

আজ ৭ ডিসেম্বর। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরেই ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে গাইবান্ধাবাসী পায় ঐতিহাসিক স্বাধীনতা তথা মুক্তির স্বাদ।

এই দিনেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে গাইবান্ধার মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ।

৭১ এর ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু করে।

৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানা। ৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় সুন্দরগঞ্জ। একে একে মুক্ত হয় সাদুল্যাপুর, সাঘাটা ও পলাশবাড়ী থানা।

দিবসটি উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সারাদেশের মতো গাইবান্ধাও একাত্তরের মার্চের শুরু থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে। সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছিল বিভিন্ন এলাকায়। এক গণজমায়েতে পুড়িয়ে ফেলা হয় পাকিস্তানি পতাকা। আর শহরের সর্বত্র উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। বর্তমানে ওই মাঠেই গড়ে তোলা হয়েছে বিজয়ের স্মৃতিস্তম্ভ।

মার্চ ২৪ শহরের ভিএইড রোডস্থ ব্যাংক ভবনে ছুটিতে আসা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা, নৌ, বিমান এবং আনসার বাহিনীর সদস্যদের এক সভায় প্রশিক্ষণ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গাইবান্ধা কলেজ ও ইসলামিয়া হাইস্কুল মাঠে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। প্রশিক্ষণ চলাকালে গাইবান্ধা কলেজের অধ্যক্ষ ওহিদউদ্দিনের সহায়তায় রোভার স্কাউটের তিনশ কাঠের রাইফেল সংগ্রহ করে পুর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদারদের গাইবান্ধা প্রবেশের আগ পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। এরপর প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা চলে যায় ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে। সেখানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি দেশের ভেতরে মরণপন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। নয় মাস ধরে চলে সশস্ত্র সংগ্রাম। একের পর এক আঘাত হানতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর।

গাইবান্ধার যুদ্ধগুলোর মধ্যে উল্লেযোগ্য যুদ্ধ হলো-বাদিয়াখালীর যুদ্ধ, হরিপুর অপারেশন, কোদালকাটির যুদ্ধ, রসুলপুর স্লুইচ গেট আক্রমণ, নান্দিনার যুদ্ধ ও কালাসোনার যুদ্ধ।

১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল বিকেলে হানাদার বাহিনী মাদারগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর হয়ে গাইবান্ধা প্রবেশ করে। তারা টিএন্ডটির ওয়ারলেস দখল করে। পরবর্তীকালে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামে (বর্তমান শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম) ঘাঁটি করে। এই ঘাঁটি থেকেই তারা শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন চালাতে থাকে। তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে অসংখ্য মানুষ ধরে এনে হত্যা করার পর মাটিতে পুঁতে রাখে। বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটের পাশেও অসংখ্য লাশ সে সময় পুঁতে রাখা হয়। তাই এই স্থানগুলো পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এর মধ্যে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে এবং স্টেডিয়ামের বাইরে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। প্রতি রাতেই স্টেডিয়ামের পাশে কফিল শাহের গোডাউন নামে পরিচিত প্রাচীর ঘেরা এই এলাকায় দালালদের সহায়তায় অসহায় মানুষদের ধরে এনে পাকসেনারা তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করত। বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের এখানে ধরে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পার্শ্ববর্তী রেল লাইনের ধারেও গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখা হতো।

এদিকে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাইবান্ধাতেও মুক্তিযোদ্ধা এবং পাক সেনাদের লড়াই অব্যাহত থাকে।

২৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সতর্কতার সঙ্গে গাইবান্ধা শহরের দিকে এগোতে শুরু করে। কিছুদূর এসে রসুলপুর স্লুইচ গেট উড়িয়ে দেওয়ার জন্য ডিনামাইট সেট করে। কিন্তু সেটা অকেজো হয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা চলে আসে। রসদ ফুরিয়ে গেলে সেখান থেকে তারা রসুলপুরে ফিরে যায়। এসময় পাকিস্তানি বিমান থেকে ওই এলাকা এবং মোল্লারচরে বোমা বর্ষণ করলে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

৬ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বিমান গাইবান্ধা রেলস্টেশনের পাশে বোমা ফেলে এবং বিকেলে ট্যাংক নিয়ে মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে শহরে।

৭১ এর এই দিনে কোম্পানি কমান্ডার বীর প্রতীক মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চর থেকে বালাসী ঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে।

এদিকে তাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে আগের রাতেই গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়ামে অবস্থিত পাক সেনা ক্যাম্পের সৈনিকরা রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়।

ফলে বর্তমান স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ ও তৎকালীন এসডিও মাঠে মুক্তিযোদ্ধা জনতার মিলন মেলায় পরিণত হয়। দশ সহস্রাধিক মানুষ সংবর্ধনা জানায় বিজয়ী বীর সেনাদের।

এর দু’দিন পর আব্দুর রহিম কোম্পানীকে সুন্দরগঞ্জ, এম এন নবী লালু কোম্পানীকে পলাশবাড়ী, খায়রুল আলম কোম্পানীকে সাদুল্যাপুর, আমিনুল ইসলাম সুজা কোম্পানীকে গোবিন্দগঞ্জ, রোস্তম আলী খন্দকার ও শামছুল আলম কোম্পানীকে সাঘাটা ও ফুলছড়ি এবং সুবেদার আলতাফ হোসেন কোম্পানী ও মাহবুব এলাহী রঞ্জু কেম্পানীকে গাইবান্ধা সদর থানার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বাভাবিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালুর আগ পর্যন্ত মাস খানেক তারা এ বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ আল হাসান জানান, দিবসটি উপলক্ষে আজ দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments