পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী— এখন পর্যন্ত ২৫০ আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৯ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পিটিআই, অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সমর্থিত। ৭১ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তার দল পেয়েছে ৫৩ আসন। এছাড়া এমকিউএম ১৭ আসনে এবং অন্যান্য দল ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে।
জানা গেছে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের। ২৬৬ আসনের একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী গুলিতে নিহত হওয়ায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ হয়েছে ২৬৫ আসনে। ফলে দেশটির ক্ষমতার মসনদে কারা বসছেন সেই হিসাব কষতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১৫ আসনের ফলাফলের জন্য।
সেদিক দিয়ে পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকা এবারের নির্বাচনে বড় চমক। ২০১৮ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে পাকিস্তানে ক্ষমতায় বসেছিল পিটিআই। সামরিক বাহিনীর বিরাগভাজন হয়ে চার বছরের মাথায় দলটির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতন হয়। এরপর রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। মামলা–হামলা ও দমনপীড়নের মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হয় পিটিআই নেতাদের।
‘জাতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে’
ইমরান খানের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গত রাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি তার একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, জাতি নজিরবিহীনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে পিটিআই বিজয়ী হয়েছে।
এদিকে পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে জোট গড়বে না বলে জানিয়েছেন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান গহর আলী খান। গতকাল জিও নিউজকে তিনি বলেন, ‘পিএমএল-এন ও পিপিপির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি না।’
জোট সরকার গড়তে চান নওয়াজ
নির্বাচনের ফল প্রকাশের মধ্যেই গতকাল লাহোরে পিএমএল-এনের প্রধান কার্যালয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন নওয়াজ শরিফ। তিনি বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পিএমএল-এন এককভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে সামনে এসেছে।
তবে সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পরিষদে এককভাবে ১৩৪টি আসন পায়নি পিএমএল-এন। তাই জোটগতভাবে সরকার গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে নওয়াজ বলেন, পাকিস্তানে বর্তমানে যেসব সংকট রয়েছে, তা থেকে উত্তরণে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
নওয়াজ শরিফ জানান, জোট সরকার গঠনের জন্য তাঁর ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ পিপিপির কো–চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি, জমিয়ত উলেমা ইসলাম-ফজলের (জেইউআই-এফ) নেতা ফজলুর রেহমান ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) নেতা খালিদ মকবুল সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে জানায়, গত রাতেই নওয়াজ বৈঠক করেছেন আসিফ জারদারির সঙ্গে। তবে বৈঠকের বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
কী করতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা?
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। তবে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তারা জাতীয় পরিষদে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩৪টি আসন পাচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে।
বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, স্বতন্ত্র এই প্রার্থীরা যদি কোনোভাবে সরকারে থাকেন, তাহলে ইমরানের কারাদণ্ডের সাজা বা তার সরকারি দায়িত্বে থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইমরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তাকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।