Monday, May 20, 2024
HomeScrollingবিদআত চালুর নেপথ্যে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র

বিদআত চালুর নেপথ্যে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র

বিদআত হলো দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু সৃষ্টি করা, যা রাসুলুল্লাহ (স.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না; বরং পরে তা উদ্ভাবন করা হয়েছে। পার্থিব বিষয়ে বিদআতের মূলনীতি হলো- তা বৈধ। আর দ্বীনের ক্ষেত্রে সকল বিদআতই হারাম ও গোমরাহি। এই বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (স.) কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭)

বিদআত শিরকের সূত্র
বিদআতকে কাজে লাগিয়ে শয়তান মানুষকে শিরকে নিমজ্জিত করে। যুগে যুগে শিরকের সূত্রপাত হওয়ার পেছনে বিদআত অন্যতম অস্ত্র ছিল। সেজন্যই শয়তান যখন দেখে মহানবী (স.)-এর উম্মত বিদআতে লিপ্ত হচ্ছে, তখন তার আনন্দের সীমা থাকে না। কোনো মুসলমান জেনা-ব্যভিচার, খুন-খারাবি করলে সে যতটা খুশি হয় তার চেয়ে বেশি খুশি হয় সুন্নত ছেড়ে বিদআতে লিপ্ত হলে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ি সুফিয়ান সাওরি (রহ) বলেন- ‘ইবলিসের নিকট নাফরমানির চেয়েও বিদআত বেশি প্রিয়। কারণ নাফরমানি থেকে তাওবা করার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিদআত থেকে তাওবা করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’ (শাতিবি, আলইতিসাম: ১/১১; ইমাম সুয়ুতি, আলআমরু বিল ইত্তিবা পৃ-১৯)

বিদআতের নেপথ্যে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র
বিদআত চালুর একটি ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র হলো- এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে শরিয়তকে অপূর্ণ আখ্যা দেওয়া হয়। যা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মতোই। অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে কোনোকিছু নতুন যোগ করার মাধ্যমে এটি বোঝানো হয় যে, শরিয়ত অপূর্ণ। পাঠক, চিন্তা করুন, উম্মতে মুহাম্মদিকে দ্বীনহীন করা কী ভয়ানক ষড়যন্ত্র! নেক সুরতে মুমিনকে গোমরাহ করার কী চমৎকার শত্রুতা! অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা দ্বীন পরিপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পরিপূর্ণ করে দিলাম…।’ (সুরা মায়েদা: ৮৯)

ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, হে লোক সকল! জান্নাতের নিকটবর্তীকারী এবং জাহান্নাম থেকে দূরকারী এমন কোনো জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে আদেশ করিনি। আর জাহান্নামের নিকটবর্তীকারী এবং জান্নাত থেকে দূরকারী এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে নিষেধ করিনি। (বায়হাকির শুআবুল ঈমান: ১০৩৭৬; হাকেম: ২১৩৬, সিলসিলাহ সহিহাহ: ২৮৬৬)

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের এ অবস্থায় রেখে গেছেন যে, কোনো পাখি শূন্যে ডানা মেলে উড়লেও তিনি আমাদের সে বিষয়ে জ্ঞানমূলক আলোচনা করতেন।’ (জামিউল আহাদিস: ৪১৬৬৭)

বিদআতের পরিণতি
হাদিসে এসেছে, বিদআতে জড়িত ব্যক্তি কেয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। কিয়ামতের দিন রাসুল (স.) বিদআতি লোকদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। তিনি তাদের বলবেন, ‘যারা আমার দ্বীনের পরিবর্তন করেছ, তারা দূর হও, দূর হও।’ (বুখারি: ৬৬৪৩)

মহান আল্লাহ নিজ নবীর ব্যাপারে বলছেন, ‘সে যদি কিছু রচনা করে আমার নামে চালাতে চেষ্টা করত, তবে আমি তাকে কঠোর হস্তে দমন করতাম এবং তার কণ্ঠশিরা কেটে দিতাম। তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না।’ (সুরা হাক্কাহ: ৪৪-৪৯) যেখানে নবীজির ব্যাপারে মহান আল্লাহর এমন কথা, সেখানে বিদআতিদের শাস্তি কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ‘বিদআতের কারণে জাহান্নাম অবধারিত।

বিদআতে জড়িতদের আশ্রয় দেওয়াও নিষেধ
বিদআতে জড়িত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে হাদিসে। এক বর্ণনায় দেখা যায়, যারা বিদআতিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা অভিশপ্ত। আবু তুফায়ল আমির ইবনে ওয়াসিলাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলি ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, নবী (স.) আপনাকে আড়ালে কী বলেছিলেন? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বলেন, নবী (স.) লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল হে আমিরুল মুমিনিন, সে চারটি কথা কী? তিনি বলেন, ১. যে লোক তার মাতা-পিতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে পশু জবাই করে আল্লাহ তার ওপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ওই ব্যক্তির ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোনো বিদআতি লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (সহিহ মুসলিম: ৫০১৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করা থেকে দূরে রাখুন এবং বিদআত থেকে দূরে থাকার ও সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments