ঈমান একজন মুসলিমের সবচেয়ে বড় সম্পদ। ঈমান ছাড়া সব আমল নিষ্ফল। কোরআনের ভাষায় ঈমানহীন ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘সময়ে কসম! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। তারা ছাড়া, যারা ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে।’ (সুরা আসর: ১-৩)
ঈমানের আলামত
ঈমান আছে কি নেই তা বোঝার উপায় বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: إِذَا سَرّتْكَ حَسَنَتُكَ وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ، فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কী? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমার ভালো কাজ যদি তোমাকে আনন্দ দেয় আর মন্দ কাজ তোমাকে পীড়া দেয় তাহলে তুমি মুমিন। (মুসনাদে আহমদ: ২২১৬৬)
ইসলামবিরোধী কাজে দুঃখ অনুভব না হলে করণীয়
কেউ যদি ইসলাম পরিপন্থী কাজ করেও অন্তরে দুঃখ অনুভব না করে, শিরক-বিদআত করেও ব্যথিত না হয়, তাহলে তার উচিত হবে ঈমানকে দ্রুত নবায়ন করে নেওয়া এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধের প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে দেওয়া। আল্লাহ তাআলার ওয়াদা- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করেছে, সৎকর্ম করেছে তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরষ্কার। তার কোনো ভয় নেই, সে চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা: ১১২)
কিন্তু আল্লাহর পথে ফিরতে দেরি করলে বড় ভুল হয়ে যাবে। এমনও হতে পারে যে, তার তাওবাও নসিব হবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন লোকদের কোনো ক্ষমা নেই, যারা পাপ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে, আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা নিসা: ১৮)
ঈমান ও আমল দুটোই জরুরি
এখনে একটি বিষয় লক্ষণীয়- আল্লাহ তাআলা বারবার বলছেন, ঈমান আনতে হবে এবং সৎকর্মও করতে হবে। কারণ ‘ঈমান হলো প্রাণ আর আমল হলো দেহ। প্রাণহীন দেহের যেমন কোনো মূল্য নেই। ঈমান ছাড়া আমলও তেমন মূল্যহীন।’ (উসুলুল ঈমান, ড. আহমদ আলী, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩১-৩২)
সুতরাং শুধু ঈমান আনলাম কিন্তু ভালো-খারাপের পরোয়া করলাম না—এমন হলে লাভের আশা করা ভুল হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘মানুষ কি ভেবে রেখেছে যে, তারা শুধু এ কথা বলেই পার পেয়ে যাবে যে, আমরা ঈমান এনেছি। (সুরা আনকাবুত: ২)
হাশরের দিন আমলহীন বান্দা ঈমান থাকার পরও বিপদে থাকবেন। তাই বিশুদ্ধ ঈমান ও নেক আমল নিয়েই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলছেন—‘তোমরা ভয় করো সেই দিনকে, যেদিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কারও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।’ (সুরা বাকারা: ১২৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ ঈমান ও নেক আমল নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।