ইসলামে একটি ফজিলতপূর্ণ বাক্য لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ‘লা হাওলা অলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’। এই বাক্যের জিকিরে রয়েছে বিস্ময়কর প্রতিদান। মুসলমানদের কাছে জিকিরটি জান্নাতের গুপ্তধন নামে পরিচিত। কেননা হাদিসে এই জিকিরের প্রতিদান সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা জান্নাতের গুপ্তধন বা ধনভাণ্ডার।
আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) একবার আমাকে বললেন, ‘তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা কি বলে দেব?’ আমি বললাম, অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ (লা হাওলা অলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ) (বুখারি: ২৯৯২; মুসলিম: ২৭০৪, তিরমিজি: ৩৩৭৪; আবু দাউদ: ১৫২৬)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) আমাকে একবার বললেন, ‘আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনগুলোর একটির সন্ধান দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল। তিনি বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। (আহমদ: ২০৮২৯) হাজিম ইবনে হারমালা (রা.) বলেন, আমি নবী (স.)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, হে হাজিম! তুমি অধিক সংখ্যায় ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বাক্যটি পড়ো। কেননা তা হলো জান্নাতের গুপ্তধন। (বুখারি: ৪২০৪, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৭৩৮৬, মুসলিম: ৫৮৯)
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতিদিন ১০০ বার ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়লে আপনার আমলনামায় মাসশেষে জমা হবে ৩ হাজার জান্নাতি ধন-ভাণ্ডার বা গুপ্তধন। (বেশি পড়লে ধনভাণ্ডারের পরিমাণও বাড়বে) অর্থাৎ, প্রতিদিন ১০০ বার করে একমাস লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ পড়লে আপনার জন্য জমা হবে ৩ হাজার জান্নাতি গুপ্তধন।
আপনি কি জানেন, জান্নাতের ভাণ্ডার কেমন হয়? যা কোনো চোখ প্রত্যক্ষ করেনি, কোনো কান যার বর্ণনা শুনেনি, কোনো মানব হৃদয়ে যার কল্পনা কখনো উদিত হয়নি- এমন অকল্পনীয় ও অভিনব সেই ধনভাণ্ডার। জান্নাতের সৌন্দর্য বাস্তবে কেমন হবে তা নিয়ে কোনো হাদিস নেই। কারণ এমন কোনো উপমা নেই- যাতে জান্নাতের সঠিক চিত্র মানুষের অন্তরে চিত্রিত হতে পারে। তবে হাদিসে বিভিন্নভাবে জান্নাতের নেয়ামত, সুখ-শান্তি নিয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৩; বুখারি: ৩২৪৪)
লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ— এই বাক্যটিকে কোনো বর্ণনায় জান্নাতের দরজা বলেও অভিহিত করা হয়েছে। কায়স (রা.) বলেন, রাসুল (স.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তখন মাত্র নামাজ শেষ করেছি। তিনি আমাকে তার কদম মুবারক দিয়ে আঘাত করলেন। বললেন, জান্নাতের দরজাগুলোর একটি কী তা আমি তোমাকে বলবো? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। (সুনান তিরমিজি: ৩৫৮১)
এছাড়াও বাক্যটির জিকির গুনাহ মাফের জন্য খুবই কার্যকর। হাদিসেই এ কথার প্রমাণ রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তার অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির মতো (বেশি পরিমাণ) হয়। (তিরমিজি: ৩৪৬০)
এই বাক্যের জিকিরে আরও অনেক ফজিলতের কথা পাওয়া যায়। যেমন- মানুষের শক্তি ও সংকল্প সুদৃঢ় হয়, অলসতা ও অক্ষমতা দূর হয়। এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলে—তখন তাকে বলা হয়, তোমাকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া হলো, তোমাকে যথেষ্টতা দান করা হলো, তোমাকে বাঁচিয়ে নেওয়া হলো এবং শয়তান থেকে রক্ষা করা হলো।’ (তিরমিজি: ৩৪২৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ জিকিরটি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।