রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় মালোপাড়া বারিশুর বাজারে দোকান করতেন শরীফুল ইসলাম। সেই বাজারে অবাধে চলত চাঁদাবাজি। এই চাঁদাবাজিতে নেতৃত্ব দিতেন আরিফ নামে এক যুবক। অন্য দিনের মতোই বাজারে চাঁদার জন্য আসেন আরিফ ও তার লোকজন। ওই সময় শরীফুল দোকান বন্ধ করছিলেন। এসময় তার দোকানে এসে আরিফ ও তার লোকজন জোর করে সিগারেট ও ক্যাশবাক্স থেকে টাকা ছিনিয়ে নেন। এতে বাধা দেন দোকানি শরিফুল। ফলে ঘটনাস্থলেই তাকেসহ তার দুই ছেলে খোকন ও শাহজাহানকে কুপিয়ে জখম করেন আরিফসহ তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় শরীফ ও তার ছেলের মৃত্যু হয়। কিন্তু সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান নিহত দোকানি শরীফের এক ছেলে।
১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাইয়ের আলোচিত এই ডাবল মার্ডারের ঘটনায় মামলা হয়। বিচারকাজ শেষে আদালত পাঁচজনের ফাঁসির আদেশ দেন। এরপর থেকে মূল আসামি আরিফ পলাতক ছিলেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। দীর্ঘ ৩০ বছর পর হত্যার মূল আসামি আরিফকে গ্রেফতারের পর দোকানি শরীফুল হত্যার নেপথ্যের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
দোকানি শরিফুলকে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ওইদিন শরিফুল রাতে বেচাকেনা শেষ করে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময় আরিফ ও তার সহযোগীরা দোকানে ঢোকেন। তারা তার দোকানের সিগারেট ও ক্যাশে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শরীফ তাতে বাধা দেন।
এ সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। শরীফের চিৎকার শুনে তার দোকানের পেছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা দুই ছেলে জেগে ওঠেন এবং তারা তার বাবাকে কোপানোর দৃশ্য দেখে আরিফ ও তার সহযোগীদের হাত-পা ধরে কাকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু হত্যাকারীরা সেদিন কোনো কথা শোনেনি। তারা বাবার পর দুই ছেলেকেও কুপিয়ে জখম করেন। ঘটনাস্থলে বাবা ও এক ছেলের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত এক ছেলেকে উদ্ধার করে বাজারের লোকজন হাসপাতালে ভর্তি করে।
আলোচিত ঘটনায় মামলা হলে দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ২০০৪ সালে আদালত পাঁচজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এরপর আবারও উচ্চ আদালত এই ঘটনায় তাদের ডাবল মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলে রায় ঘোষণার সময় শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ওরফে নজু এবং মিষ্টার ছাড়া অপর দুই আসামি আরিফ ও মাসুদ পলাতক ছিলেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
ভুয়া পরিচয়পত্রেও রক্ষা হলো না!
গ্রেফতার আরিফ বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এসে তার নাম ও পরিচয় গোপন করে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। তার ধারণা ছিল, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করলে হয়ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ানো সম্ভব হবে। ঢেউটিন ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে গেলে আরিফ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শরিফুলের পরিচয়ে মুদি ও লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা করে আসছিলেন।
গ্রেফতার আরিফের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা।