শেখ মোঃ ইমরান, গোপালগঞ্জ|
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় নিষিদ্ধ বরিং ড্রেজার (স্থানীয় নাম আত্মঘাতী ড্রেজার) দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সমতল ফসলি জমি, পুকুর, খাল থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার ফলে ভূমি ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে কাশিয়ানীর পরিবেশ-প্রতিবেশ।
কাশিয়ানী উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের মধ্য তিতাগ্রাম গ্রামে বুধবার দিনভর অন্যের ফসলি জমি এবং বিলের পুকুর থেকে বরিং ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে। সেই বালু দিয়ে প্রায় দেড়-দুই হাজার ফুট দূরের একটি পুকুর ও সংযোগ রাস্তা খাল ভরাট করা হচ্ছে। ওই গ্রামের শেখ আউলাদ আলীর ছেলে প্রভাবশালী ইকবাল শেখ অন্যের জমি থেকে বালু তুলে বিভিন্ন ব্যাক্তিদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে বালু বিক্রয় করে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জমির প্রকৃত মালিকরা।
স্থানীয়রা আরো জানায়, ইকবাল শেখ ৪০নং তিতাগ্রাম শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী। চাকরির পাশাপাশি ইকবাল দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ বালুর ব্যবসা করে আসছে। ইকবালের ১০-১৫ টির বেশি বরিং ড্রেজার রয়েছে। বেশ কয়েকবার সরকার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার জব্দ ও জরিমানা করেন। জব্দ ও জরিমানার করার কিছুদিন বালু উত্তলন বন্ধ থাকলেও পুণরায় আবার বালু উত্তলন শুরু হয় দপ্তরী ইকবালের। আত্মঘাতী এই ড্রেজার দিয়ে সমতল মাটির তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি দেবে যাওয়াসহ আশপাশের পরিবেশেরও ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জমির মালিকেরা জানান, তাদের জমির পাশের জমি থেকে বালু তুলে প্রায় দেড়-দুই হাজার ফুট দূরের বিশাল পুকুর ও রাস্তার খাদ ভরাট করছেন তারা। বালু তোলার কারণে জমির তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এতে যে কোনো সময় বিশাল এলাকা নিয়ে জমি দেবে যেতে পারে। বালু তোলা বন্ধ করতে বললে তারা কোনো কথাই শুনছেন না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বালু উত্তোলকারী ইকবাল শেখ জানান, যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে সেই জমির মালিক তারা। তাদের জমি থেকেই তারা বালু তুলে পুকুর ও রাস্তার খাল ভরাট করছেন। এই ব্যাপারে নিউজ করতে চাইলে ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, বেশ কয়একবার তাকে নিয়ে নিউজ করা হয়েছে। এতে তার কীছু যায় আসেনা আর নিউজ করলে তার কোন সমস্যাও নাই।
ইকবাল আরো বলেন, আপনারা যান নিউজ-টিউজ করতে পারেন করেন গ্যাঁ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আহমদ মিয়াঁ মুঠোফোনে বলেন, বরিং ড্রেজার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইকবাল বরিং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলন করেন এবং বিক্রি করেন এ বিষয়ে আমি জানি। ইকবাল তার নিজ জমি থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলন করছে এবং তার চাচাকে বালু দিচ্ছে।
ইকবালের কয়টি ড্রেজার আছে জানতে চাইলে মেম্বার আহমদ মিয়াঁ বলেন, আমার জানা মতে ইকবলের একটা ড্রেজার আছে। প্রশ্ন প্রেক্ষিতে মেম্বর আহমদ মিয়াঁ বিভিন্ন পাল্টা প্রশ্ন ছোড়েন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ইকবাল তার নিজ জমি থেকে বরিং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে এটা যদি অন্যায় হয়ে থাকেতো এটা অন্যায়।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদি হাসান বলেন, বরিং ড্রেজার দিয়ে ভুগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে অবৈধ ড্রেজার মালিক ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ln24bd/E