কারও কাছে অনুনয় নয়, নিজ গুণেই নারীদের তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বেলা পৌনে একটার দিকে জয়িতা ফাউন্ডেশনের ধানমন্ডিস্থ নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন শেষে গণভবনে নারী উদ্যোক্তা এবং সারাদেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীদের সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু মাথা খুটলে আর আকুতি জানালে হবে না, নিজেদের গুণেই নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলেই কারও মুখাপেক্ষি হয়ে আর থাকতে হবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, সমাজে কেন নারীরা পিছিয়ে থাকবে, নারী জাগরণের নেত্রী বেগম রোকেয়া তো আমাদের প্রথম শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নারীদের শিক্ষার জন্য বেগম রোকেয়া যে অবদান রেখে গেছেন তার তুলনা হয় না। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটা সময় এদেশের নারীরা জজ-ব্যারিস্টার হবেন, সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। আজ দেশের নারীরা সব জায়গাতে তাদের আপন মহিমায় স্থান করে নিতে পেরেছেন।
‘একটা সময় রাষ্ট্রপতিকে বলেছিলাম, নারী নাম না থাকলে সেই ফাইল আমি কার্যকর করব না। কেননা, রাষ্ট্রপতির ফাইল তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসে। আবার নারী এসপি করার সিদ্ধান্তের সময় অনেকেই ইতস্তত করেছিলেন। কিন্তু এখন এটা প্রমাণিত তারাও পারে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে। নারীকে পর্দার আড়ালে বন্দি রেখে, কাজ করতে না দিয়ে ইসলাম রক্ষা হয় কিভাবে? সবক্ষেত্রে এখন নারীদের সমান অধিকার আদায় করে নিতে হবে।-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, সমাজের অর্ধেক হচ্ছে নারী, তাদের অবহেলিত রেখে একটি সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। নারীরা শুধু আমাদের অধিকার দাও বললে চলবে না, নারীদের অধিকার নারীদের আদায় করে নিতে হবে। নারীদের অধিকার নিজের গুণে অর্জন করতে হবে।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তিনি এ দেশে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে কিন্তু নারীর সমঅধিকারের কথা বলা আছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে, তার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন।-যোগ করেন শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়ার শাসনামলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সবক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। পরীক্ষার পাসের হারেও দেখা যাচ্ছে মেয়েরা এগিয়ে। পৃথিবীতে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির কথা বলা হয়, আমাদের দেশে তো এটার উল্টো ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ এখন সবক্ষেত্রেই মেয়েরা এগিয়ে আছে। জয়িতার মাধ্যমে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি নারীর ক্ষমতায়ানও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সেই চেষ্টা থাকতে হবে সবারে মধ্যে জানান শেখ হাসিনা।
এর আগে সকাল ১০টায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণলায়ের আওতাধীন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ধানমন্ডিস্থ নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।