Tuesday, July 1, 2025
HomeScrollingচিনির সংকট আরো ‘১০-১২ দিন’

চিনির সংকট আরো ‘১০-১২ দিন’

অনলাইন ডেস্ক।।

দেশে চলমান চিনির সংকট বুধবারও স্বাভাবিক হয়নি। ক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ৩০ টাকা বেশি দিয়েও চিনি পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, এ মূহূর্তে বাজারে কোনো চিনি নেই। দু-একটি দোকানে যে চিনি ছিল তাও মানুষের চাহিদার তুলনায় অনেক কম এবং সেই চিনি শেষ হয়ে আসছে। সংকট সমাধানে মিল মালিকদের প্রতিশ্রুতির চিনি বাজারে আসতে আরও ১০-১২ দিন সময় লাগতে পারে।

বুধবার রাজধানীর বাড্ডা, কাওরান বাজার ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশিতে। এর মধ্যে হাতেগোনা যে কয়েকটি দোকানে চিনি আছে। কেবল তারাই বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করছেন।

বাড্ডার কয়েকটি দোকানে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে।

বাড্ডা এলাকার মা স্টোরের বিক্রেতা ফারুক বলেন, পাইকারি বাজার থেকে ৫০ কেজির বস্তা কিনে আমাদের হাতে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১০০ টাকা পড়ছে। এর সঙ্গে যাতায়াত ও অন্যান্য খরচসহ প্রায় ১০৮ টাকা পড়ে যাচ্ছে। সামান্য লাভে সেটি ১১৫ টাকায় বিক্রি করছি।

একই বাজারে দেখা হয় রিমি নামের এক গৃহিণীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এটি আমাদের ভাগ্য। দেশের ব্যবসায়ীরা আমাদের পিষে মারবে আর আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপায় মারা যাব।

নিউমার্কেট এলাকার অনেক দোকানে খোঁজ নিয়ে খোলা চিনি পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু দোকানের প্যাকেট চিনি রয়েছে।

ব্রাদার স্টোরের এক বিক্রেতা শুকলাল  জানান, প্রতি মাসে এক বস্তা করে চিনি বিক্রি হয় আমাদের। সেই অনুযায়ী চিনি তুলি দোকানে। তবে এবার চিনির সংকট পড়ায় স্বাভাবিক সময়ের থেকে অনেক বেশি চিনি বিক্রি হয়েছে। মাত্র কেজি ১০ চিনি আছে। এটিও হয়তো দু-একদিনে মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে কাওরান বাজারের চিনির পাইকারদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আরো ১০ দিন আগে চিনির জন্য অগ্রীম টাকা দিয়ে এখনো চিনি পাননি। ঠিক কবে পাবেন তার কোনো হদিস নেই। কোম্পানির প্রতিনিধিদের থেকেও এর কোনো সঠিক উত্তর পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে কাওরান বাজারের ফ্রেশ চিনির ডিলার সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের এক বিক্রিয় কর্মী দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকারী কালোবাজারিদের আড়াল করে সবসময় আমাদের জমিরানা করে যাচ্ছে। এতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে আর চিনিই বিক্রি করব না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে মেঘনা গ্রুপের ডিলার বলেন, চলতি মাসের ১৮ তারিখে চিনির জন্য অগ্রীম টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনো চিনির কোনো দেখা নেই। বিক্রিয় প্রনিধিদের কাছে জানতে চাইলে তারাও কিছু বলতে পারছে না এবং নতুন করে কোম্পানিগুলো কোনো চিনির অর্ডারও নিচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে চিনির সংকট মোকাবিলায় মিল-মালিকদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হতে অন্তত আরো দিন দশেক অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। যেদিন থেকে হাতে নিয়ন্ত্রিত মূল্যের চিনি আসবে সেদিন থেকে আবার চিনি বিক্রি শুরু করব।

দেশের বাজারে চিনি উৎপাদনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনা মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সোমবার থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের কাছে ভর্তুকি মূল্যে চিনি বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির ট্রাক সেলে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে চিনি কিনতে পারছেন সাধারণ মানুষ। এ জন্য টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডেরও প্রয়োজন হচ্ছে না।

সোমবার বেসরকারি চিনি সরবরাহকারী মিল মালিক ও চিনি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন, চাহিদা অনুযায়ী আরো তিন মাসের অপরিশোধিত চিনি রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চিনি পরিশোধন করতে পারেনি মিলগুলো। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক সময়ের চিনির সংকট পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। এরই মধ্যে পরিশোধনকারী মিলগুলো চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক করবে।

ওই সভায় ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এমন পরিস্থিতির পরও চিনি নিয়ে মহাসংকট হয়েছে। এর আগে ভোজ্যতেল নিয়েও এমন করা হয়েছিল। পরে সেখানে কারসাজি ছিল সেটার প্রমাণ পেয়েছি। চিনির ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা হতে পারে। সেটা দেখছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ৯০ টাকার চিনি রাতারাতি ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হবে।

সফিউজ্জামান বলেন, দেশে প্রতিদিন চিনির চাহিদা ৫ হাজার টন। বড় একটি গ্রুপ একাই প্রতিদিন এ পরিমাণ চিনি পরিশোধন করতে পারে। এমন ৫টি কোম্পানি রয়েছে চিনির বাজারে। তারপরও তারা কেন পারছেন না? চিনির সংকট কেন হলো?

সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, সব থাকার পরও চিনি নেই। সেটা গ্যাসের সমস্যার কারণে। চিনি পরিশোধনে স্ট্রিম করতে গেলে গ্যাসের চাপ পাচ্ছি না। সিটির দিনে উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার টন। কিন্তু চিনি হচ্ছে ১৩০০-১৪০০ টন। মেঘনাসহ সবার এ অবস্থা। এখন গ্যাসের সমস্যা সমাধান হলে বাজারে চিনির অভাব হবে না।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments