Sunday, May 12, 2024
HomeScrollingদর পতনের সব রেকর্ড ভাঙার পরও কমছে পাকিস্তানি রুপির দাম

দর পতনের সব রেকর্ড ভাঙার পরও কমছে পাকিস্তানি রুপির দাম

অনলাইন ডেস্ক।

ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দর পতন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে অনেক আগেই। এরপরও রুপির দরপতন থামছে না। বুধবার আরেক দফা নেমেছে পাকিস্তানি রুপির মান। বর্তমানে পাকিস্তানের মুদ্রাবাজারে ১ ডলারের বিপরীতে মিলছে ২০৬ দশমিক ৫০ রুপি।

গত মে মাস থেকে হু হু করে হ্রাস পেতে শুরু করে পাকিস্তানি রুপির মান। ১৯ মে পাকিস্তানে ১ ডলারের বিপরীতে রুপির মান পৌঁছায় ২০০-তে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে নিজেদের মুদ্রার এই পরিমাণ পতন দেখেনি পাকিস্তান।

তবে সেখানেই থেমে থাকেনি রুপির দরপতন, বরং দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নেমেছে মান। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাকিস্তানে ১ ডলারের বিপরীতে রুপির মান ছিল ২০৫ দশমিক ২৫। বুধবার তা আরও নেমে পৌঁছেছে ২০৬ দশমিক ৫০ রুপিতে।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণকারী ওয়েব পোর্টাল মেট্টিস গ্লোবালের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক দ্য ডন।

মেট্টিস গ্লোবালের পরিচালক সাদ বিন নাসির এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে দ্য ডনকে বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রকল্প স্থবির অবস্থায় থাকা, জঙ্গিবাদে অর্থায়ন পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) ধূসর তালিকায় (গ্রে লিস্ট) থাকা, চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ ও জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য— এই চার কারণে ব্যাপক চাপে রয়েছে পাকিস্তানের অর্থনীতি; আর তার ফলাফলই হলো রুপির এই ধারাবাহিক দরপতন।

দ্য ডনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি করেছিল পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার। সেই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানকে সাড়ে তিন বছর (৩৯ মাসে) কিস্তিতে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ঋণদাতা সংস্থা।

তবে তার বিপরীতে আইএমএফের কিছু শর্ত ছিল। এসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত ছিল যে, সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের জ্বালানি খাতে কোনো ভর্তুকি দেওয়া যাবে না।

কিন্তু পিটিআই সরকার ২০২১ সালের শুরুর দিকে জ্বালানিতে ভর্তুকি বিষয়ক শর্ত অমান্য করায় ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ ছাড়ের পরই সেই প্রকল্প থামিয়ে দেয় আইএমএফ।

গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান ইমরান খান, নতুন প্রধানমন্ত্রী হন দেশটির সাবেক বিরোধী নেতা শাহবাজ শরিফ। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসেও পূর্ববর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় আইএমফ ঋণ প্রকল্পের অচলাবস্থা আর কাটেনি।

এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানির ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহার করা কঠিন দেশটির সরকারে জন্য।

শনিবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেছেন, জ্বালানির ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহারের পরিবর্তে কর ব্যবস্থার সংস্কার ও আয়করের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আইএমএফকে অবহিতও করা হয়েছে; কিন্তু আইএমএফ এই সিদ্ধান্ত মঞ্জুর করেছে কি না- তা এখনও স্পষ্ট নয়।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগ বেশ পুরনো। দীর্ঘদিন ধরেই এই দেশটি জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে এফটিএফের ধূসর তালিকায় রয়েছে। এ কারণে আর্থিক ঋণ প্রদান বা বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করায় গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে কমে আসছে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার ঋণ ও বিনিয়োগ। এসব কারণেই পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর প্রতিদিনই চাপ বাড়ছে এবং তার ফলেই পতন ঘটছে রুপির।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments