আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের এক মাস হয়ে গেছে। তবে তালেবান ঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেনি এবং তালেবানের নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতও অব্যাহত রয়েছে।
তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা আর আগের মতো নেই, বাস্তবতার প্রয়োজনে নিজেদের বদলে ফেলেছে। দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই তালেবানরা নিজেদের বদলে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের চেষ্টাও করছে। মানবাধিকার, নারী অধিকার, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, সবার অংশগ্রহণের সরকার সহ অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে তারা।
কিন্তু তারা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা খুব একটা বদলেছে।
তবে তালেবানরা না বদলালেও তারা ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের অনেক কিছুই বদলে গেছে। এমন দশটি পরিবর্তন জেনে নেওয়া যাক…
১. সঙ্গীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা: তালেবানরা রেডিও স্টেশনগুলোতে গান বাজানোর বিরুদ্ধে আদেশ জারি করেছে। সেই আদেশের পর থেকে, রেডিও স্টেশনগুলোতে কেবলমাত্র তাদের ইসলামি দেশাত্মবোধক সঙ্গীত বাজানো হচ্ছে। এছাড়া গণসম্মুখেও গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২. পাঞ্জশিরের পতন: অবশেষে অজেয় পাঞ্জশির প্রদেশের পতন ঘটেছে তালেবানের হাতে। ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফোর্স তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, কিন্তু পরে পাকিস্তানের সহায়তায় এই অজেয় আফগান প্রদেশ দখল করতে পেরেছে তালেবান।
৩. ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় থাকারা সরকারে: তালেবান সরকারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকারাও আছে।
৪. নারীর অধিকার: নারীদের কর্মক্ষেত্রে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তালেবানদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় নারীদেরকে মারধরও করা হয়েছে। নারীদের সব ধরনের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছেলেদের জন্য ৪০০ খেলার অনুমোদন দেওয়া হলেও নারীদের কোনো খেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ক্রিকেট, ফুটবল সব কিছুতে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীদের হাইস্কুলও এখনো খোলা হয়নি।
৫. রাজনীতিতে নেই নারীরা: তালেবান ঘোষিত মন্ত্রী সভায় কোনো নারী নেই সব পুরুষ। তাদের মতে নারীরা শুধু স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কাজ করতে পারবে। তবে নারীরা মন্ত্রী-এমপি বা বড় কর্মকর্তা হতে পারবে না।
৬. সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ: কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কেবল তখনই অনুমোদন পাবে যদি তা ইসলামি শরিয়া আইনে বৈধ হয়। জিন্স প্যান্ট পরায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিউটি পার্লারের বাইরের ছবিগুলো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
৭. সাংবাদিক অধিকার: সাংবাদিকরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হত্যাও করা হয়েছে।
৮. অর্থনীতি: খরা ও দুর্ভিক্ষ এবং মানুষকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। তালেবানরা নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে এই মাসের শেষের দিকে খাবার শেষ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে অন্তত দেড় কোটি মানুষ অনাহারে মরার ঝুঁকিতে রয়েছে।
৯. বিক্ষোভ নিষিদ্ধ: বিক্ষোভকারীদের দেখলেই তালেবানরা বাতাসে গুলি ছুড়ে এবং প্রতিবাদকারীদের মারধর করে। তালেবানরা বলেছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো বিক্ষোভ করা যাবে না। তালেবান আরো বলেছে, বিক্ষোভের বিবরণ সরকারের সাথে শেয়ার করতে হবে।
১০. অভিবাসী সংকট: তালেবানের ক্ষমতা দখলের ফলে একটি বড় অভিবাসী সংকট দেখা দিয়েছে। তালেবানদের ভয়ে আফগান জনগণ বিপুল সংখ্যায় দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে এবং এর ফলে একটি বিশাল আফগান অভিবাসী সংকট দেখা দিতে পারে।
তালেবানরা তাদের কট্টরপন্থা না বদলালেও তাদের অধীনে আগের সরকারের মতো ব্যাপক ঘুষ দূর্নীতি নেই। বিবিসির এক প্রতিবেদনে তালেবানদের ঘুষ-দূর্নীতি না করার বিষয়টি উঠে এসেছে।