চন্দ্রিমা উদ্যানের কবরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি (পুলিশের সঙ্গে) সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। বিএনপি কি জানে না যে, সেখানে জিয়ার কবর বা কবরে জিয়ার লাশ নেই? যদি তাই হয়, তাহলে তারা এই নাটক কেন করে? খালেদা জিয়া তা ভাল করেই জানেন।’
রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সম্প্রতি সংঘর্ষের ঘটনা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব বলেন।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সেখানে (চন্দ্রিমা উদ্যানে) জিয়াউর রহমানের লাশ নেই, সেটা বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানার পরও কেন তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
খালেদা জিয়া অথবা তারেক জিয়া জিয়াউর রহমানের লাশ দেখেছিলেন কিনা প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতা হলো বুলেটে জর্জরিত লাশও সহজেই শনাক্ত করা যেত। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে যে বাক্সের মধ্যে লাশ আনা হয়েছিল সে বাক্সের মধ্যে কেউ জিয়ার লাশ দেখতে পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সেই সময় এইচ এম এরশাদের কাছ থেকে শুনেছেন যে, বাক্সের মধ্যে যে লাশটি ছিল তা সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু জিয়া সে সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আর রাষ্ট্রপতি কখনো সামরিক পোশাকে থাকেন না।
তিনি জানতে চান, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা কি জানেন না যে, রাষ্ট্রপতি সামরিক পোশাক পরিধান করেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনে করেছিল যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে কিছু স্থানীয় সহযোগিদের সহায়তায় হত্যা করতে পারলেই দেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ হয়ে যাবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান দেশের কোথাও কখনও সরাসরি যুদ্ধ করেননি এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে জিয়া খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার উৎস ছিলেন বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান জেলের ভেতর জাতীয় চারনেতা হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তিনিই সীমিত সম্পদ দিয়ে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এনেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা খাদ্য না থাকা, মুদ্রা জমা না থাকা ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা না থাকা দেশটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা অর্জন করা ভুল ছিল এবং সেজন্যই দেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পরপরই ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল।
তিনি বলেন, সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে তারা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিবন্ধী নারী বাসন্তীকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে বিশ্বব্যাপী তার সেই ছবি প্রচার করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সেই সময় মাছ ধরার একটি জালের দাম ছিল ১৫০ টাকা, আর একটি শাড়ীর দাম ছিল ৬ থেকে ৭ টাকা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার জন্য যারা সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল তারাই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ব্যর্থ প্রমাণ করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার দেশের ও দেশের মানুষের জন্যই কিছুই করেনি।
তিনি বলেন, তারা তিনজনই, তার মধ্যে জিয়া অন্যতম যিনি দেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করেছিলেন এবং দেশকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেধাবীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে রাতে কারফিউ জারি থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই দেশে ভোট জালিয়াতি শুরু করেছিলেন এবং বারবার সংবিধান লঙ্ঘণ করেছিলেন।