Monday, May 6, 2024
HomeScrollingবঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির সংযোগ না থাকার ধারণা অস্বাভাবিক: মার্ক টালি

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির সংযোগ না থাকার ধারণা অস্বাভাবিক: মার্ক টালি

অনলাইন ডেস্ক।।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তির সংযোগ না থাকার ধারণাকে অস্বাভাবিক হিসাবে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক স্যার মার্ক টালি।

মঙ্গলবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই আয়োজিত আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্ক টালি বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন। বিবিসি রেডিওতে তার পরিবেশিত খবর ছিল মানুষের মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ জানার প্রধান উৎস। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখায় মার্ক টালিকে ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দিয়েছিল বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে মার্ক টালি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তির সংযোগ না থাকার ধারণা অস্বাভাবিক।

‘শকওয়েভস অব অ্যাসাসিনেশন: সাউথ এশিয়া ১৯৭৫’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করে মার্ক টালি বলেন, “জন্মলগ্নে যুদ্ধবিপর্যস্ত বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমন্বিত উন্নয়ন সবচেয়ে বড় অর্জন। আশা করি, বাংলাদেশ বর্তমান সময়ের মতো ধর্মনিরপেক্ষ থাকবে। আমি একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি এবং আমি চাই বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষই থাকবে।”

ভারতের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিস্তৃতির প্রশংসা করে টালি বলেন, “আমি দার্জিলিং বোর্ডিং স্কুলে গিয়েছিলাম। সেখানে যখন শুনলাম, শিলিগুড়ি থেকে ঢাকার রেল সংযোগ তৈরি হবে, তখন আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম।”

তিনি বলেন, “দুদেশের মধ্যে বর্তমানে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। তবে, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হলে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।”

অতীতে দুদেশের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার স্মৃতিচারণ করে মার্ক টালি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারত বেশ অখুশি হয়েছিল এবং সম্পর্কের বেশ অবনতি ঘটে। কিন্তু তার দল ও মেয়ে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হয়। সমস্যা আছে এবং সমস্যা থাকবে, মূলত সম্পর্ক খুব ভালো।”

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “দুটি ভিন্ন ধরনের ধারা প্রবাহিত ছিল সে সময়। একটি হলো- পশ্চিমা ধারার অর্থনীতি, সমাজতন্ত্রবিরোধী ও ভারতবিরোধী। আর অন্যটি যেটাকে আমি বলতে পারি… ইসলামী ধারাও ছিল।”

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পাকিস্তানের জন্মের পরপরই শুরু হয়েছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ভাষা আবেগের বিষয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে জিন্নাহ বড় ভুল করেছিলেন। এর প্রতিরোধ ছিল সহজাত এবং সেটা পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছিল।”

তিনি বলেন,“বাঙালি জাতির নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতায় দেওয়া ছিল যথাযোগ্য। আপনারা দেখছেন, কীভাবে হিন্দি ও হিন্দি চালুর বিরোধিতা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বড় ইস্যু হিসাবে রয়েছে।”

আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ থাকার কথা তুলে ধরেন মার্ক টালি।

তিনি বলেন, জাতীয় পুনরুত্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির চাবিকাঠিই হচ্ছে ধর্মীয় আধুনিকতা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে!

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষায় ১৯৭৫ সালে যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তার কোনো দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নাই। এটা একটি দেশের জন্য বিব্রতকর। এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছিল এবং পরবর্তী বছরগুলোতে খুনীদের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “খুনিরা বিদেশে বন্ধু বানিয়েছে এবং এটা খুনিদের অবস্থান শনাক্ত করা ও তাদের ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টাকে কঠিন করে তুলেছে।”

খুনিদের দ্রুত বিচার না করে দেশের সাধারণ আইনি ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।

তিনি বলেন, “একটা বিষয় ভাবুন, আপনি একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আপনি জানেন আপনার বাবা, মা, তিন ভাই, ভাবীদের ও অন্য আত্মীয়দের হত্যাকারী কারা। এর মধ্যে আপনার সুযোগ আছে দ্রুত বিচার কিংবা বিশেষ আদালত করার।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিকে যাননি; বিপরীতে বাংলাদেশের বিচারিক কাঠামোতে আস্থা রেখেছেন এবং বিচার শুরুর জন্য অপেক্ষা করেছেন কয়েক দশক।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন ব্যক্তিত্বের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ওয়েবিনারে দেখানো হয়। এতে নোবেলবিজয়ী উইলি ব্রান্ড বলেছিলেন, “শেখ মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না।”

 

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments